'কেউ বলেনি তবু এলাম। বলতে এলাম ভালোবাসি। জন্মাবধি ভেতর থেকে এক রঙিন পাখি কেঁদেই গেলো। শুনলো না কেউ ধ্রুপদী ডাক।' শেষবারের মতো সভ্যতা ও শুভ্রতাকে বুকে নিয়ে প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ এলেন নীরবে। লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে চড়ে, কাফনে মুড়িয়ে শেষ বিদায় নিতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এলেন জন্মাবধি ভেতর থেকে ডেকে যাওয়া এক রঙিন পাখি।
একাডেমির নজরুল মঞ্চে, ভক্ত, অনুরাগী ও বিশিষ্টজনদের শোক আর শ্রদ্ধার ফুলে সিক্ত হয় কবির মরদেহ। কবিভক্তদের ভাবনায় তখন- কতটুকু দিলে বলো মনে হবে দিয়েছি তোমায়? আপাতত তাই নাও যতোটুকু তোমাকে মানায়।
প্রিয় কবিকে শেষবারের জন্য দেখতে এসে ভক্ত ও পরিবারের সদস্যদের বলেন, অর্থের জন্য নয়, তিনি কবিতা লিখতেন জীবনের জন্য। হয়ত এভাবেই নত হতে হতে হবে পৃথক পাহাড়। মাটি ও মানুষ পাবে, পেয়ে যাবে ধ্রুপদী আকাশ।
ভাইয়ের মেয়ে বলেন, ‘চাচ্চু শেষ সময়ে আমাদের সাথে থাকো। তাহলে তুমি সুস্থ হয়ে যাবা আমাদের ভালো লাগবে তুমি থাকলে।’
জানাজা শেষে কবির সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, তার অসমাপ্ত পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ থাকবে বাংলা একাডেমিতে।
ফারুকী বলেন, ‘তারুণ্য আর যৌবনের গান বললেই হেলাল হাফিজের কথা মনে পড়ে। এইটা তার অর্জন। এর বাহিরেও তিনি অনেক কবিতা লিখেছেন। একাকিত্বের কবিতা লিখেছেন।’
বাংলা একাডেমিতে জানাজা শেষে দ্বিতীয় জানাজার জন্য কবির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার প্রিয় প্রাঙ্গণ জাতীয় প্রেসক্লাবে। সেখানেও তাকে শেষ বিদায়ের শ্রদ্ধা জানানো হয়।
কবিতায়, বেদনাকে কাঁদতে না বললেও, ভক্তদের কাঁদিয়ে পৃথিবীর প্রেম সাঙ্গ করে অনন্ত পথের দিকে যাত্রা করলেন প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজ। কবির লেখা 'প্রস্থান' কবিতার মতো হৃদয়ে অনুরণ তোলে সেইসব বিরহী বর্ণমালা। 'আর না হলে যত্ন করে ভুলেই যেয়ো, আপত্তি নেই। গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে? আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি, ভুল করেছি।'