জানা যায়, গত শুক্রবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে বোয়ালমারী উপজেলা সদরে বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরেরদিন শনিবার (৮ নভেম্বর) রাতে থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলা করেছেন দুই পক্ষ। এ দুই মামলায় ২২৪ জনের নাম উল্লেখসহ ৮৭৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুটি মামলার মধ্যে একটি দায়ের করেন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ফরিদপুর-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী শামসুদ্দিন মিয়া ঝুনুর সমর্থক মজিবুর রহমান বাবু। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তার দায়ের করা মামলায় অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে এক নম্বর আসামিসহ ১৮৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ জনকে।
মজিবুর রহমান বাবুর দায়ের করা মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন- ছয় নম্বরে গুনবহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম (৫৭), ২২ নম্বরে শেখর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ (৪৮), ১১২ নম্বরে সাতৈর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাফিউল আলম মিন্টু (৪৮), ১১৩ নম্বরে দাদপুরের মোশারফ হোসেন মুশা (৪৭) ও ১৫০ নম্বরে রুপাপাতের মিজানুর রহমান সোনা মিয়া (৪৪)।
সংশ্লিষ্ট পরিষদের একাধিক সদস্য ও সচিবদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের আসামি করায় স্বাভাবিক কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। কেউ কেউ পরিষদে আসলে কিছু সময় থেকেই চলে যান।
শেখর ইউনিয়ন পরিষদের সাত নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, ‘চেয়ারম্যান ঠিকমতো পরিষদে আসছেন না, কোনো এক সময় আসে আবার চলে যায়। তাতে আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না।’
এছাড়া যারা জন্মনিবন্ধনসহ অন্য সেবা নিতে আসছেন সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের জন্য সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন:
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, ‘নাগরিক সেবায় যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হবে। এছাড়া এমন অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে মামলার বাদী মজিবুর রহমান বাবু দাবি করেন, এ পাঁচ চেয়ারম্যান খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক।
তিনি বলেন, ‘এ পাঁচজনের মধ্যে শুধু সিরাজুল ইসলাম বিএনপির এবং বাকিরা আওয়ামী লীগের লোক। গত ৫ আগস্টের পর খন্দকার নাসির সাহেবের আশ্রয়ে যায় এবং তাকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিপুল পরিমাণ টাকা ও লোকজন দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে। শুক্রবারের ঘটনায় এরাই বিপুল লোকের সমাগম ঘটিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’
তবে এ সংঘর্ষ ও মামলা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না দাবি করে দাদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতিই করি না এবং সম্পৃক্তও না। আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ইউনিয়নের প্রতিপক্ষের ইন্ধনে আসামি করা হয়েছে।’
এছাড়া সাতৈর ইউপি চেয়ারম্যান চিকিৎসক দেখাতে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানান এবং বাকি তিনজনের মোবাইল নম্বরে সাড়া পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে ৩৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও খন্দকার নাসিরুল ইসলামের সমর্থক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম। তিনি গুনবহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও অপর মামলার আসামি।
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহামুদুল হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি, অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’





