টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই হাসপাতালের সিভিল কাজের সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় এক কোটি ৩২ লাখ টাকা। যার মধ্যে স্যানিটারি কাজের জন্য বরাদ্দ হয় ৪১ লাখ টাকা। অথচ অধিকাংশ টয়লেটের কমোড, বেসিন ও কল ভাঙা। ব্যবহারের অযোগ্য এসব টয়লেটের জন্যই ব্যয় দেখানো হয়েছে লাখ লাখ টাকা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বরাদ্দের তুলনায় কাজ হয়েছে খুবই নিম্নমানের। অসঙ্গতি থাকায় সেসময় ফাইলে স্বাক্ষর করেননি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কও।
গাজীপুরের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন খান বলেন, ‘স্যারের কাছে টাকার পরিমাণটা এত বেশি মনে হয়েছে যে স্যার সেটাতে সাইনই করেনি। এ কাজগুলো পরে আর হয়নি। আমরা প্রত্যয়নও দেইনি।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আফজালুর রহমান বলেন, ‘ডিটেইলস ওয়ার্ক অর্ডার, টাকার পরিমাণসহ ওইরকম আসলে আমরা পাইনি এবং ওনারা দেখায়ওনি।’
আরও পড়ুন:
শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও একই চিত্র। এই হাসপাতালে চারটি সিভিল কাজের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এক কোটি দুই লাখ টাকা। একই অর্থ বছরে আরও ছয়টি সিভিল কাজের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৮৮ লাখ টাকা। কিন্তু এত বরাদ্দের পরও হাসপাতালের ভবনে উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও নেই।
হাসপাতালের এ্যালুমিনিয়াম পার্টিশন, ফলস সিলিং ও বাথরুমের সংস্কারের জন্য দুটি কাজের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫২ লাখ টাকা। বেজমেন্টে অ্যাম্বুলেন্স রাখার কথা থাকলেও ভারত সরকারের দেয়া বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্সের ‘উচ্চতা বেশি’ এই অজুহাতে গ্যারেজ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ২৩ লাখ টাকা। অথচ এই অ্যাম্ব্যুলেন্সে সাধারণ কোনো রোগীর সেবা মেলেনি।
সেবা প্রত্যাশীরা জানান, গাজীপুরের কোনো ব্যক্তি এখনও এই অ্যাম্ব্যুলেন্স ব্যবহার করেনি। তাছাড়া বাজেট এবং বরাদ্দ থাকার পরেও সেটা কাজে না লাগানোর কারণে হাসপাতাল পরিবেশ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন অধরা রয়ে গেছে।
হাসপাতালটির পরিচালক জানান, কাজের শুরুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়নি। এমনকি কাজ শেষেও অনাপত্তিপত্রও নেয় নি গণপপূর্ত বিভাগ। যার ফলে কাজের মান যাচাই করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মিনিস্ট্রি থেকে অনুমোদনের পরে টেন্ডার করা বা কার্যাদেশ দেয়া, চলমান কাজ দেখা এবঙ প্রত্যয়ন নেয়া—এগুলো ধারাবাহিকভাবে না নেয়ার কারণে কাজ ঠিকভাবে মনিটরিং সম্ভব হয়নি।’
আরও পড়ুন:
অভিযোগ উঠেছে, অর্থ লোপাটের সাথে জড়িত তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দীন ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাওন চৌধুরী। টেন্ডার ছাড়াই কাজ দেয়া, বিল আদায় ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আশরাফ উদ্দীন দাবি করেন, পুরো কাজ সম্পন্ন করেই বিল দেয়া হয়েছে।
গাজীপুর গণপূর্ত বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দীন বলেন, ‘৬৯ লাখ টাকার টেন্ডার হয়েছে। কাজ হয়েছে এবঙ সেটা দৃশ্যমান আছে। যদি আমি এমন কোনো বিল দিয়ে থাকি যে সেটার কাজ হয়নি কিন্তু আমি বিল দিয়েছি, সেটার দায়ভার আমার।’
এদিকে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কাজ শেষে সাশ্রয়কৃত অর্থ ফেরত দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের কোনো টাকা ফেরত যায়নি।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হেজবুল কবীর বলেন, ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছিল। আমরা নথিপত্র ঘেটে দেখেছি যে, ওই অর্থবছরে কোনো অর্থ ফেরত যায়নি।’
প্রতিবছর স্বাস্থ্যখাতে কোটি টাকার সরকারি বরাদ্দ দেয়া হলেও দুর্নীতির কারণে অধরাই থেকে যায় কাঙ্খিত উন্নয়ন। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, এসব দুর্নীতি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার।



