নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ১১ বছর, রায় কার্যকর নিয়ে সন্দিহান নিহতের পরিবার

৭ খুন মামলায় মরদেহ উদ্ধার করার এবং জেলা দায়রা জজ আদালতের ছবি
৭ খুন মামলায় মরদেহ উদ্ধার করার এবং জেলা দায়রা জজ আদালতের ছবি | ছবি: এখন টিভি
0

নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার উচ্চ আদালতের রায় ১১ বছরেও কার্যকর হয়নি। এখনও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন, হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতের রায় হওয়ার পরও কার্যকর না হওয়া দুঃখজনক। এমনকি, রায় আদৌ কার্যকর হবে কি না, সন্দিহান তারা।

কিশোরী রোজা মনির সব কথা বাবার ছবির সাথে। জন্মের মাস খানেক আগে বাবাকে হারায় সে। বেশিদিন স্বামীর ঘর করা হয়নি রোজার মা সামসুর নাহার নুপুরের। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনে গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের পরিবারের একটাই চাওয়া, রায় কার্যকর।

নিহত জাহাঙ্গীরের মেয়ে রোজা বলেন, ‘রাত হয়ে গেলে, যাতায়াতে পথে অনেক সময় অনেকে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাবা বেঁচে থাকলে আমাকে নিয়ে যাওয়া-আসা করতে পারতেন। এখন একটাই চাওয়া, আমার বাবার খুনের বিচার কার্যকর করা।’

জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সামসুর নাহার বলেন, ‘১১ বছর হয়ে গেল, কিন্তু আমি এটা কখনও আশা করিনি; এই ৭ খুনের বিচার হতে এত সময় লাগবে। এক যুগ হয়ে যাচ্ছে, অথচ এখনও সরকারের দিক থেকে কোনো পদক্ষেপ নেই।’

এদের মতো হত্যাকাণ্ডের শিকার ৬ পরিবারেও হতাশা। ১১ বছর ধরে স্বজন হারানোর বেদনা বয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দেয়া হলেও, খোঁজ রাখেনি কেউ। রায় কার্যকরে দেরি হওয়ায় সংশয়ে বিচারপ্রার্থীরা।

নিহতের পরিবারের স্বজন সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতের রায় হয়েছে, কিন্তু এরপরও কেন ৮ বছর যাবৎ রায় কার্যকর হয় না? আমরা অনেকটা অনিশ্চয়তায় আছি, আদৌ এই রায় কার্যকর হবে কি না।’

দ্রুত শুনানি ও নিষ্পত্তি করে রায়টি শিগগিরই কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘আমরা চাই, দ্রুত আপিল বিভাগে এই মামলাটির শুনানি হোক। শুনানির পর যে রায় হয়, তা কার্যকর হোক।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ জাকির বলেন, ‘মামলার সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেকেই এই মামলার ব্যাপারে আন্তরিক। বিষয়টি আমরা বিভিন্নভাবে তুলে ধরছি এবং সরকারও এই বিষয়ে অনেক বেশি আন্তরিক। সরকারের চাওয়া, একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলার রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে অপহরণের শিকার হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জন। পরে ৩০ এপ্রিল ও ১ মে শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে তাদের মরদেহ।

২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রধান আসামি নূর হোসেন ও সাবেক তিন র‍্যাব কর্মকর্তাসহ আসামি ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করলে ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১১ জনের যাবজ্জীবন ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন উচ্চ আদালত।

এসএইচ