কমলাপুর প্লাটফর্মে আহত মেয়েকে নিয়ে অসহায়ভাবে পরিবারের বসে থাকার এই দৃশ্য গত ২৯ জানুয়ারির। মেয়ের একপাশের জখম থেকে যখন রক্ত ঝরছে, তখন নির্বাক পুরো পরিবার। কোথায় যাবেন কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না বৃদ্ধ বাবা-মা।
বাসা থেকে কমলাপুরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলে পথে মতিঝিল শাপলা চত্বরে মাইক্রো বাসে আসা ছিনতাইকারীর হামলার শিকার হন তারা। ছিনতাইকারীরা চলন্ত গাড়ি থেকেই ব্যাগ টান দিলে সড়কে পড়ে থেতলে যায় ভুক্তভোগীর মুখের একপাশ।
দেশজুড়ে বেপরোয়া ছিনতাই, চুরি, ধর্ষণ, ডাকাতি প্রতিনিয়ত বেড়ে যাওয়ায় নাগরিকদের মাঝে বাড়ছে আতঙ্ক। এমনকি কোথাও কোথাও অপরাধীদের গ্রেপ্তার অভিযানে হামলা শিকার হচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। এমন প্রেক্ষাপটে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর উপর থেকে আস্থা হারাচ্ছেন নগরবাসী। পাশাপাশি রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা জোরদারে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
সম্প্রতি অপরাধ দমনে ডেভিল হান্ট নামে অভিযান পরিচালনা করছে যৌথবাহিনী। আর এই অভিযানে এখন পর্যন্ত আটকের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এরপরও দমন করা যাচ্ছে না সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্ত্রাসীরা যেই দলেরই হোক না কেন প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘ডেভিল হান্ট অপারেশনের যে লক্ষ্য তা যেন সামগ্রিকভাবে পরিচালিত হয়। অর্থাৎ এটি শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা প্রশ্নে এবং আইনশৃঙ্খলা নিরাপত্তা প্রশ্নে কিন্তু খুব একটা ফলাফল তৈরি করবে না।’
অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কার্জন নরসিংদী থেকে জেলে থেকে আট শত জঙ্গি পালিয়ে গেল। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিনে জেল থেকে বের করে আনা হলো এবং দশ হাজার অস্ত্র লুট হলো যার মধ্যে দুই হাজারের বেশি অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয় নাই। এসবের কোনো বিষয়ে তো আমরা কোনো প্রকার অগ্রগতি দেখতে পারছি না।’
৫ আগস্টের পর বেশ কয়েকটি কারাগার থেকে কয়েদি পালানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী। একই সাথে থানা থেকে হারিয়ে যাওয়া অনেক অস্ত্রও এখনো উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব কারণে অনেক অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে বলে মনে করেন এই অপরাধ বিজ্ঞানী।
অপরাধ প্রবণতা আগের থেকে বেড়েছে বলে স্বীকার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে অপরাধ দমনে আইনি তৎপরতা আগের চেয়ে জোরদার বলে দাবি পুলিশের এই কর্মকর্তার।
ডিএমপি গণমাধ্যম বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দিনে রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫০০ অধিক পেট্রোল টিম নিয়োজিত থাকে। এছাড়া ফুট পেট্রোল রয়েছে আর আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো অপরাধ প্রবণ এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে এবং অভ্যাসগত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনেই আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।’
সন্ত্রাস দমনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তার পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।