নারায়ণগঞ্জে র্যাব-১০ এর আলোচিত-সমালোচিত সাবেক কর্মকর্তা ও পুলিশের এএসপি আলেপ উদ্দিন। যার বিরুদ্ধে আটক, গুম, নির্যাতনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে এক যুবক এবার এনেছেন তার স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ। জঙ্গি সম্পৃক্তায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আটক করার পর তার স্ত্রীকে ডেকে ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে এএসপি আলেপ উদ্দিন।
এমন অভিযোগ এনেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, আলেফ ছিলেন গুম করায় সিদ্ধহস্ত। ধর্ষণসহ সব অপরাধের তথ্য প্রমাণ প্রসিকিউশনের হাতে রয়েছে।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, 'আজকে এই ট্র্যাইব্যুনালের কক্ষে আপনারা দেখেছেন আমার পেছনে অনেকে দাঁড়িয়ে আছেন যাদেরকে আলেপ উদ্দিন গুম করে, অপহরণ করে বছরের পর বছর আটকে রেখেছিল। তাদেরকে নিষ্ঠুরতম পন্থায় নির্যাতন করেছিল। ইলেক্ট্রিক শক দেয়া, চোখ বেঁধে রাখা, উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটানো, বিদ্যুতায়িত করা এবং সবচেয়ে মারাত্মক যেটা করেছিলেন যে, একজন আসামিকে গুম করে রাখার সময়ে তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্ত্রীকে তার স্বামীকে হত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে বাধ্য করে একাধিকবার রমজান মাসে রোজা ভাঙিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এই তথ্য প্রমাণাদি আমাদের কাছে এসেছে।'
এদিকে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ জিয়াউল আহসানসহ ৮ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ২৮ এপ্রিল দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দু'জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে ২৮ মে দিন ধার্য করা হয়েছে।
গেলো বছরের জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার আন্দোলন দমনে চরম বল প্রয়োগ করে তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আন্দোলন দমনে রাজপথে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। অনেকেই পুলিশের গুলিতে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যান।
হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের ২৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া আট কর্মকর্তাদের বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মরতুজা মজুমদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়। ছাত্র জনতার আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হত্যা, হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর বিষয়ে জানতে চায় সাবেক আইজিপির কাছে। এজন্য তাকে একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় ট্রাইব্যুনাল।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, 'জুলাই-আগস্টের সমস্ত হত্যাকাণ্ড, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল, এপিসি, হেলিকপ্টার, মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। এই বিষয়ে তিনি আগে একটা জবানবন্দি দিয়েছেন। সেই জবানবন্দির সূত্র ধরে আরও অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। যেগুলোর ব্যাখ্যা তার কাছ থেকে আমাদের দরকার। হেলিকপ্টার অপারেশন কার নির্দেশে হয়েছিল, কারা কারা যাত্রী ছিল, কতগুলো ফ্লাইট পরিচালনা করা হয়েছিল, কী ধরনের অস্ত্র পরিবহন করা হয়েছিল? পুলিশের প্রধান হিসেবে তার এটা জানার কথা। সেই বিষয়ে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য একদিনের সময় চেয়েছি।'
গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত শেষ করার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে তদন্ত সংস্থা। আইনশৃঙ্খলার ১০ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।