গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন সরই ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের ছবি ছন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা জগমন ত্রিপুরার ছেলে স্টিফেন ত্রিপুরা ও যোয়াকিম ত্রিপুরা, একই ওয়ার্ডের টংগঝিড়ি পাড়া বাসিন্দা গোবিন্দ্র ত্রিপুরার ছেলে মসৈনিয়া ত্রিপুরা, ওমর আলীর ছেলে মো. ইব্রাহিম।
স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, লামা সরইয়ের পূর্ব বেত ছড়া পাড়া এলাকায় বসবাসরত ত্রিপুরাদের ঘরবাড়ি গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ১২টায় দুর্বৃত্তরা পুড়িয়ে দিয়েছিল।
বেতছড়া পাড়ার প্রধান (কার্বারী) পাইসাপ্রু ত্রিপুরা বলেন, 'টংগঝিড়ি এলাকার নতুন পাড়া বেতছড়া পূর্বপাড়া নামে পরিচিত। পাড়াবাসীদের বেদখল হওয়া জায়গা থেকে অবৈধ দখলদার লোকজন চলে যাওয়ার পর ১৯টি ত্রিপুরা পরিবার সেখানে বসবাস করে। তারা সবাই পুরনো টংগঝিরি পাড়ার বাসিন্দা। ১৯ পরিবার পূর্ববেতছড়া পাড়ায় বসতি করে। বড়দিন উপলক্ষ্যে বেতছড়া পাড়ার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি খালি রেখে মঙ্গলবারে সবাই পুরনো টংগঝিরি পাড়ায় যায়। কারণ পূর্ববেতছড়াপাড়ায় কোনো গীর্জা নেই। রাতে মানুষ শূন্য পাড়ায় দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দেয়। দু'টি ঘর বাদে পাড়ার ১৭টি ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।'
ক্ষতিগ্রস্ত গুঙ্গামনি ত্রিপুরা বলেন, 'পূর্ব বেতছড়া পাড়ায় ১৯টি পরিবার বসবাস করে কিন্তু পাড়ায় খ্রিষ্টানদের কোনো প্রার্থনা ঘর গির্জা নাই সেজন্য বড়দিন উপলক্ষে পুরাতন তংগঝিড়ি পাড়া গীর্জায় রাতে প্রার্থনা করতে গেলে দুর্বৃত্তরা রাত সাড়ে ১২টার দিকে ১৭টি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। আমরা এক পোশাকে আছি, আমরা সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।'
লামা থানায় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ভোরে এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত চারজন আসামিকে লামা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
হাঁসমাইটি ত্রিপুরা স্বামী ওবোদিয়া ত্রিপুরা বলেন, 'বড়দিন উদযাপনের জন্য পুরনো টংগঝিড়ি পাড়ায় গেলে ২৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে সন্ত্রাসীরা আমাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। দোষীদের আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।'
সরই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস কোম্পানি বলেন, 'আট নম্বর ওয়ার্ড টংগঝিড়ি এলাকায় পূর্ব বেতছড়ি পাড়াতে ২৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে ১৭টি ঘর পুড়ে গেছে। কারা আগুন দিয়েছে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।'
বান্দরবান পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বলেন, 'ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। ঘটনায় ভুক্তভোগীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করে গত রাতে মামলার সাতজন এজাহারভুক্ত আসামির মধ্যে চারজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।'
আর এর আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক বলেন, 'পাড়ায় ১৯টি পরিবারের মধ্যে ১৭টি ঘর আগুনে পুড়ে গেছে। পুলিশ সুপার সাথে আছেন এটা তদন্ত করে দোষীদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।'
গতকাল (বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর) লামা উপজেলার নির্বাহী অফিসার কম্বল কাপড়-চোপর, চাল, কিছু শুকনো খাদ্য সহায়তা করা হয়েছে। তার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদেরকে পুনর্বাসন করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।