'মা আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি আর নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান। তোমার কথা অমান্য করে বের হলাম। স্বার্থপরের মত ঘরে বসে থাকতে পারলাম না।'
এই চিঠি লিখে বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে গিয়েছিলেন কিশোর আনাস।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অভিযোগ দায়ের করতে এসে শহীদ আনাসের মা বললেন, সম্পূর্ণ নিরস্ত্র অবস্থায় যারা টার্গেট শ্যুট করে তার সন্তানকে হত্যা করেছে, সেই হত্যাকারী ও নির্দেশদাতার বিচার চান তিনি।
আনাসের মা সানজিদা খান দিপ্তী বলেন, 'আমার সন্তানের জন্য বিচার চাইতে এখানে আসছি, অভিযোগ নিয়ে। এ দেশের সংবিধান অনুযায়ী যতটুকু সর্বোচ্চ শাস্তি, এই হুকুমদাতা থেকে পালনকারী প্রত্যেকের সাজা চাই।'
তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশন মিলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণহত্যার বিচার এখন পর্যন্ত ৫১টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, যার অধিকাংশের প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ (বুধবার, ২ অক্টোবর) সবশেষ দু'টি অভিযোগের ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মো. তাজুল ইসলাম জানান, গণহত্যার বিচার নিশ্চিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।
মা-বাবার উদ্দেশে কিশোর আনাসের লিখে যাওয়া চিঠি। ছবি: এখন টিভি
তিনি বলেন, 'যে অপরাধ বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে সংগঠিত হয়েছিল, সেই অপরাধের যারা অপরাধী তাদের আমরা আইন অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি করতে পারি। এই লক্ষ্য নিয়ে আমাদের কার্যধারা চলছে। এর মধ্যে আজকে আমাদের কাছে দু'টি উল্লেখযোগ্য অভিযোগ জমা পড়েছে।'
এই দিন আইসিটিতে আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন রাজনৈতিক দল এনডিএম এর প্রধান ববি হাজ্জাজ। গণভবনে ১৯ জুলাইয়ে ১৪ দলের বৈঠকের সূত্র ধরে তার অভিযোগ, জুলাই গণহত্যার দায় শুধু আওয়ামী লীগের নয়, ১৪ দলেরও।
ববি হাজ্জাজ বলেন, '১৪ দলের বৈঠকের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার গণমাধ্যমকে পরিষ্কারভাবে জানায় যে, ১৪ দলের বৈঠকের মাধ্যমে তারা ওই সিদ্ধান্তে আসেন যে উনারা কারফিউ জারি করবেন। এবং এই কারফিউতে তারা দেখামাত্র গুলি করার অর্ডার জানান।'
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা হিসাবে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দল হিসেবে যে দলগুলোর কথা উঠে আসে সেগুলো হলো- সাম্যবাদী দল, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, জাসদ (ইনু), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মেনন), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি।
এছাড়াও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণআজাদী লীগ, কমিউনিষ্ট কেন্দ্র, বাসদ এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ গঠন করে তদন্ত পূর্বক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগের প্রশ্নে চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম জানান, প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ সফরের কারণে নিয়োগে বিলম্ব হয়েছে।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, 'আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই, কিন্তু কোনো সময় উল্লেখ করছি না, যেকোনো মুহূর্তে খবর পাবেন যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়ে যাবে।'
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাজুল ইসলাম আরো জানান, বিদ্যমান আইনে কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বিচার করতে কোনো বাধা নেই। তবে শাস্তি কী হবে তা নির্ধারণ করতে আইন সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে।