ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি | ছবি: এখন টিভি
0

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি জেলায় আলাদা গুলির ঘটনায় তিনজন নিহতের পর উদ্বেগ বাড়ছে জনমনে। জাতীয় নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। কীভাবে অবৈধ অস্ত্র এসেছে সন্ত্রাসীদের হাতে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে সীমান্ত এলাকা দিয়ে কোনো অবৈধ অস্ত্র ঢোকেনি বলে দাবি করে নির্বাচন ঘিরে সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের কথা জানিয়েছে বিজিবি।

গত ২৭ নভেম্বর মধ্যরাতে আধিপত্য বিস্তারের জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কান্দিপাড়ায় গুলি করে হত্যা করা হয় সাবেক ছাত্রদল কর্মী সাদ্দাম হোসেনকে। অভিযোগ উঠে, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন দিলীপকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

পুলিশ জানায়, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা দিলীপের সঙ্গে কান্দিপাড়ার বাসিন্দা লায়ন শাকিলের আধিপত্যের বিরোধ দীর্ঘদিনের। এর জেরে ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় দু’পক্ষের গোলাগুলি হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয় তিনজন। এ ঘটনার জেরেই সাদ্দামকে গুলি করে হত্যা করা হয় দাবি পুলিশের।

এর আগে ১ নভেম্বর পূর্ববিরোধের জেরে নবীনগরের বড়িকান্দিতে প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন শিপন ও ইয়াছিন নামে দুই যুবক। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা রিফাত আহমেদকে গ্রেপ্তার এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করে র‌্যাব।

তার আগে, ২৪ অক্টোবর নবীনগরে নিজ বাড়ির সামনে বিএনপি নেতা মফিজুর রহমান মুকুলকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। সবশেষ গত ৩০ নভেম্বর বাঞ্ছারামপুরে সাবেক ইউপি সদস্য আবু মুসা সরকারকে গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

গুলির ঘটনা ছাড়াও চুরি-ছিনতাই, ধর্ষণ ও গ্রাম্য দাঙ্গা বেড়ে অবনতি ঘটেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি ভোটারদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন:

এলাকার সাধারণ মানুষরা জানান, পাড়া-মহল্লায় চুরি ছিনতাই তো হচ্ছেই। পাশাপাশি অস্ত্রের ঝনঝনানি এটিও শুরু হয়ে গেছে। সম্প্রতি ঘটা এসব ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। সামনে জাতীয় নির্বাচন আসছে। এখনো যদি অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার দেখা যায় তাহলে বিষয়টি তাদের জন্য খুবই উদ্বেগজনক।

তবে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানতে নারাজ জেলা পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না থাকলেও সন্তোষজনক জানিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলমান বলে জানান এ কর্মকর্তা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীদের অশ্বত্ব করতে চাই। আমরা অবশ্যই সক্রিয় রয়েছি। আইনশৃঙ্খলা ভালো রাখতে আমাদের যা যা করণীয় সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট রয়েছি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের তৎপরতা আরও বৃদ্ধি পাবে।’

আর বিজিবি জানায়, সীমান্ত এলাকা দিয়ে কোনো অবৈধ অস্ত্র ঢুকেনি। তবে নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহমেদ বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ৩৯ দশমিক ২ কিলোমিটার আমাদের দায়িত্বের এলাকা। আমরা বলতে পারি এখান থেকে কোনো অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। সামনেও যেন কোনো অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি।’

গত জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় ৩৪টি হত্যাকাণ্ড, ৩৭টি ধর্ষণ, ১২৪টি চুরি, ১১টি ডাকাতি এবং ৯টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে থানায়।

এফএস