সুনামগঞ্জে আর আগের মতো ভিড় নেই অতিথি পাখির, হতাশ পাখিপ্রেমীরা

সুনামগঞ্জের হাওরে অতিথি পাখি
সুনামগঞ্জের হাওরে অতিথি পাখি | ছবি: এখন টিভি
0

সুনামগঞ্জে এক সময় সুদূর সাইবেরিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মাইল পথ পাড়ি দিয়ে প্রায় ২১৯ প্রজাতির অতিথি পাখি আসতো। ৯৮ প্রজাতির পরিযায়ী, ১২১ প্রজাতির দেশি ও ২২ প্রজাতির হাঁসজাত পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠতো প্রান্তিক জনপদের এ এলাকা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এ জেলায় পাখির আগমন কমে যাওয়ায় হতাশ পাখিপ্রেমী পর্যটকরা।

নীল আকাশ, স্বচ্ছ পানি আর শীতল বাতাসের মিশেলে এক অপরূপ প্রকৃতি। এর মাঝেই সাদা ডানা মেলে ঝাঁক বেধে উড়ছে অতিথি পাখি।

প্রতি বছর শীতকালীন আশ্রয়ের সন্ধানে হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আসে বাংলাদেশের হাওর-বিলাঞ্চলে আসে এসব পরিযায়ী পাখি। কিন্তু টাঙ্গুয়ার হাওরে অবাধে পর্যটকদের চলাচল, পাখি শিকারিদের হানাসহ নানা কারণে বর্তমানে হুমকির মধ্যে পড়েছে পাখিদের এ আবাসস্থল। দিন দিন কমছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা।

পাখি বিজ্ঞানী ও আইইউসিএনের তথ্যমতে, টাঙ্গুয়ার হাওরে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ২১৯ প্রজাতির পাখি ছিলো। একসময় বিলুপ্তপ্রায় প্যালাসিস ঈগলের দেখা মিলতো এ হাওরে। ছিলো কালেম, পানকৌড়ি, ভূতিহাঁস, পিয়ংহাঁসসহ নানা জাতের পাখি। তবে, সেই চিত্র এখন পাল্টেছে।

বার্ডস ক্লাবের তথ্যমতে, গেলো কয়েক বছরে সুনামগঞ্জের হাওরে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমেছে ৮৫ শতাংশ। তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ২০১৫ সালে ২ লাখ, ২০১৮ সালে ৬০ হাজার, ২০২২ সালে ৩০ হাজার, ২০২৩ সালে ৪৩ হাজার এবং সবশেষ ২০২৪ সালে ২৩ হাজার পরিযায়ী পাখি এসেছিল।

আরও পড়ুন:

বার্ডস ক্লাবের সদস্য সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, ‘বিগত কয়েক বছর যাবত পরিযায়ী পাখি ব্যাপক পরিমাণে কমে গেছে। এর অন্যতম কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণের ঋতু চক্রের তারতম্য। আবার বিভিন্ন কারণে পাখি নিধন হচ্ছে বিল সেচ, কীটনাশক দেয়া’।

জেলার পাখিপ্রেমীরা জানান, মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জেলায় অতিথি পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে। পাখি শিকার ও পাচার বন্ধে প্রশাসন কঠোর হলে এবং সচেতনতা বাড়ানো গেলে জেলায় আবারও অতিথি পাখির সংখ্যা বাড়বে বলে আশা তাদের।

এদিকে, জেলা প্রশাসক জানালেন, অতিথি পাখি রক্ষায় প্রশাসন সবসময় সর্তক ও কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো.ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাখি ধরে ভিডিও বানালে, আমরা মামলা দেই। এ বছর যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে সে ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব।’

পাখি শিকার ও পাচার বন্ধে জেলা প্রশাসন বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করলে, আবারও পাখিদের কলতানে মুখর হয়ে উঠবে হাওর এলাকা, এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।

এফএস