নওগাঁ সদর উপজেলার সবুজে ঘেরা দেবীপুর গ্রাম, যা 'বাঁশির গ্রাম' নামে পরিচিত। গত চার দশক ধরে এখানকার দুই শতাধিক পরিবার তৈরি করছেন খেলনা বাঁশি।
দিনমজুর থেকে বাঁশি তৈরির কারিগর হয়েছেন রেজাউল মন্ডল। জমি না থাকায় বন্ধক নিয়ে চাষ করছেন নলখাগড়া। বৈশাখকে ঘিরে দেড় লাখ টাকার বাঁশি বিক্রির আশা তার। যেখানে খরচ বাদে লাভ থাকবে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
রেজাউল মন্ডল বলেন, 'গতবারের তুলনায় এবারে একটু দামে বেশি হচ্ছে আর একটা যদি বেশি হয় তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে। আর সরকারি কোনো সহযোগিতা যদি আমরা পাই তাহলে আরও আগাতে পারবো।'
খেলনা বাঁশি তৈরির প্রধান কাঁচামাল নলখাগড়া জমি থেকে কাটার পর পরিষ্কার করে, কেটে রোদে শুকিয়ে অন্তত ১০টি ধাপে তৈরি হয় বাঁশি। একেকটি বাঁশি তৈরিতে খরচ পড়ে দেড় টাকা থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় দুই থেকে সাত টাকায়। গৃহবধূরা বাঁশির সৌন্দর্য বাড়াতে রঙিন কাগজ আর বেলুন পেঁচিয়ে আয় করছেন বাড়তি অর্থ।
নারী কারিগরদের মধ্যে একজন বলেন, 'এক হাজার বাঁশি পেঁচলে ১৮০ টাকা পাওয়া যায়। এটা দিয়ে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সংসার চালানো হয়।'
কারিগরদের মধ্যে একজন বলেন, 'বাঁশির দাম একটা বাড়ছে কিন্তু মজুরিটা বাড়েনি। মজুরিটা আগের মজুরিটাই আছে।'
বৈশাখ উপলক্ষে এই গ্রামের বাঁশির চাহিদা থাকে তুঙ্গে। কারিগরদের কাছে বাঁশি কিনে সিলেট, খুলনা, ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় পাইকাররা জানান, শুধু বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই কোটি টাকার বাঁশি তৈরি হবে দেবীপুর গ্রামে।
কারিগরদের মধ্যে একজন বলেন, 'প্রতিবছর প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকার মতো বাঁশি বিক্রি করা যায়। এ থেকে অনেক মুনাফা হয়।'
বাঁশির মতো কুটির শিল্পকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন সরকারি সহায়তা। স্বল্প সুদে ঋণসহ প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলছেন বিসিক কর্মকর্তা।
নওগাঁ বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক শামীম আক্তার মামুন বলেন, 'নারী উদ্যোক্তাদের পাঁচ শতাংশ সরল সুদে আমরা ঋণ সুবিধা দিয়ে থাকি। খুব সহজ শর্তে আমরা দেই। আর পুরুষ উদ্যোক্তাদের ছয় শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হয়।'
বছরে এ গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কোটি পিস বাঁশি তৈরি হয়।