মস্কোতে বসেই সিরিয়ায় প্রভাব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা আসাদ সরকারের

সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী
সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী | ছবি: সংগৃহীত
0

মস্কোতে বসেই সিরিয়ায় নিজেদের হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন ক্ষমতাচ্যুত আসাদ সরকারের দুই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। রাশিয়া, লেবানন ও আমিরাতে গড়ে তোলা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী গঠনে অর্থায়ন চালু রেখেছেন তারা। তবে দেশ-বিদেশে গড়ে ওঠা গুপ্ত নেটওয়ার্কের ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার কথা জানিয়েছে শারা প্রশাসন।

বাবা-ছেলের ৫৩ বছরের স্বৈরশাসনের পতন ঘটিয়ে গেলবছরের ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার দখলে নেয় ইসলামপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম। এরপর দেশটির প্রেসিডেন্ট হন ৪৩ বছর বয়সী আহমেদ আল শারা। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত সিরিয়া পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাচ্ছে শারা সরকার।

নভেম্বরে প্রথম সিরীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটন সফরে যান শারা। এরপর যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ১৮০ দিনের জন্য প্রত্যাহার করে।

তবে আসাদ পরবর্তী প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে যখন সিরীয় জনগণ, ঠিক তখনই চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স। আর এতে কলকাঠি নাড়ছেন বাশারের দুই ঘনিষ্ঠ মেজর জেনারেল কামাল হাসান ও ধনকুবের রামি মাকলুখের।

মস্কোতে আসাদের সঙ্গে নির্বাসনে থাকা সাবেক সামরিক গোয়েন্দা প্রধান হাসান, সিরিয়ায় আত্মগোপনে থাকা কমান্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। আর আসাদের চাচাতো ভাই মাখলুফ, বিদ্রোহী বাহিনী গঠনে রাশিয়া, লেবানন ও আরব আমিরাতে থাকা এজেন্টদের মাধ্যমে সিরিয়ায় অর্থ পাঠাচ্ছেন।

আরও পড়ুন:

তাদের লক্ষ্য যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির সংখ্যালঘু আলাউত সম্প্রদায় অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ ফেরানো। যাদের বেশিরভাগেরই বসবাস সিরিয়ার উপকূলীয় এলাকায়। ৯ মার্চ নিজেকে 'দ্যা কোস্ট বয়' হিসেবে উল্লেখ করে সিরিয়ায় দ্রুত প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা দেন রামি মাখলুখ।

মস্কোতে তার দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী হলেন হাসান ও খলিল। তারা মাকলুখের পক্ষে সিরিয়ায় ৫৪ হাজার বিদ্রোহী গঠনের দাবি করেন।

মাকলুখের এক আর্থিক ব্যবস্থাপকের বরাতে রয়টার্সের প্রতিবেদন বলছে, বিদ্রোহীদের বেতন বাবদ মাসে ৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম বলে দাবি করেন মাকলুখের এক বিশ্বস্ত। জানান, প্রতি মাসে একজন সৈনিক মাত্র ২০ থেকে ৩০ ডলার পান।

দখল হারানো এলাকার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে আসাদের আরেক ঘনিষ্ঠ কামাল হাসান। লেবাননে থাকা হাসানের এক সহযোগী জানান, গেল মার্চ থেকে সিরিয়া ও লেবাননে সৈন্য গঠনে দেড় মিলিয়ন অর্থ ব্যয় করেন হাসান।

এছাড়া, বছরের মাঝামাঝিতে আলাউত সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে ডেভেলপমেন্ট অব ওয়েস্টার্ন সিরিয়া নামে একটি দাতব্য সংস্থা গড়ে তোলেন কামাল হাসান। আগস্ট নাগাদ ৪০টি আলাউত সম্প্রদায়ের পরিবারের বাসস্থান নিশ্চিতে ৮০ হাজার ডলার খরচ করে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত ক্ষমতাচ্যুত আসাদ সরকারের পক্ষে জনমত তৈরিতে পর্দার আড়াল থেকে কাজ করছে গোষ্ঠীটি।

তবে আসাদের এই গুপ্ত অনুচরদের বিষয়ে অবগত সিরিয়ার বর্তমান সরকার। জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় গুপ্ত নেটওয়ার্কগুলো সরকার পতনে ভূমিকা রাখতে পারবে না বলে আশাবাদী শারা প্রশাসন।

মার্চে আসাদপন্থীদের একটি ব্যর্থ ষড়যন্ত্রের পর, দামেস্ক ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় শারার বাল্যকালের বন্ধু খালেদ আল আহমাদকে নিয়োগ দিয়েছে। আলাউত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি গোষ্ঠীটির সঙ্গে নতুন সরকারের সন্ধি গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন। একারণে চাকুরি হারানো আলাউত যুবকদের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষে কাজ করছেন তিনি।

সেজু