মোদিকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে স্বীকার করলেও রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করায় নয়াদিল্লির বেশ কিছু পণ্যে ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে গেল নভেম্বরে মস্কো থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের সবচেয়ে বড় শিল্পগোষ্ঠী ও মুকেশ আম্বানির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। এমনই এক প্রেক্ষাপটে ৪ বছর পর ২ দিনের ভারত সফরে রুশ প্রেসিডেন্ট।
যুদ্ধবিমান থেকে বাণিজ্য রুট, সাবমেরিন লিজ নেয়া থেকে মহাকাশ প্রযুক্তি- অনেক চুক্তির সম্ভাবনাই উঁকি দিচ্ছে পুতিনের এই সফর কেন্দ্র করে। ইউক্রেন যুদ্ধ, ট্রাম্পের তৃতীয় মেয়াদ, শুল্ক দ্বন্দ্ব- নানা পট পরিবর্তনেও ভাটা পড়েনি মস্কো-নয়াদিল্লির সম্পর্কের রসায়নে। আর পেছনে আছে যুদ্ধাস্ত্র আর সামরিক প্রযুক্তি ভাগাভাগির সমীকরণ।
আরও পড়ুন:
এ নিয়ে মোট ১০ বার ভারত সফরে গেছেন পুতিন। এরমধ্যে ৪ বারই ক্ষমতায় মোদি। বিপরীতে মোদি রাশিয়ায় গেছেন মোট ৭ বার। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় মোদি-পুতিন সম্পর্কের গভীরতা। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা যেভাবে মস্কো বিরোধী অবস্থানে, সেখানেও রাশিয়ার সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখেছে ভারত। মস্কোর তেল কেনা নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বিরোধ হলেও কূটনৈতিকভাবে তা মোকাবিলার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। ভারতীয় এখনও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ৬০ শতাংশই মস্কোভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের, সোভিয়েত আমলে যা ছিল প্রায় ৮০ শতাংশ।
১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সোভিয়েত নির্মিত কার্গো বিমান আমদানি করে ভারত। ১৯৬০ এর দশকে কেনা হয় এমআই ফোর হেলিকপ্টার। ১৯৬২ তে মিগ-২১ বিমান যৌথভাবে নির্মাণে প্রযুক্তি হস্তান্তরে সম্মত হয় দুই দেশ। বিশ্বের মোট ১১ হাজার ৫০০ মিগ ২১ বিমানের ১২০০ একাই দখলে নেয় ভারত। ১৯৮০'র শুরুর দিকে সুইং–উইং মিগ-২৩ ও এর আকাশ প্রতিরক্ষা সংস্করণ মিগ-২৩এমএফ এর নির্মাণ বা অ্যাসেম্বল শুরু করে মস্কো-নয়াদিল্লি। সবশেষ ১১৪টি যুদ্ধবিমান তৈরি করতে ভারত যে মাল্টি-রোল ফাইটার এয়ারক্রাফট প্রকল্প ঘোষণা করেছে সেখান থেকে দু'টি বিমান কেনার প্রস্তাব করেছে মস্কো।
ভারতকে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রের সেটও দিয়েছিল রাশিয়া। মিগ-২১–এর সঙ্গে যে কে-১৩ মিসাইল পাঠানো হয়, সেটাই ছিল প্রথম প্রজন্মের এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। যৌথভাবে বানানো ব্রহ্মোস ক্রুজ মিসাইল এরইমধ্যে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর, রুশ যুদ্ধজাহাজ অ্যাডমিরাল গরশকভের আধুনিক সংষ্করণ বিমানবাহী জাহাজ আইএনএস বিক্রমাদিত্য ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘস্থায়ী বিমান সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।
২০০৭ সালে যৌথভাবে পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান সু-৫৭ বিমান তৈরির চুক্তি করে নয়াদিল্লি-মস্কো। ২০১৮তে ভারত ওই চুক্তি থেকে বের হয়ে গেলেও রাশিয়া একাই এই প্রকল্পে সফল হয়। ২০২৫ এ মস্কো আবারও ভারকে সু-৫৭ বিমানের প্রোডাকশন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাব গ্রহণ করলে শুধু বিমান নির্মাণ নয়, পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তিও হাতে পাবে নয়াদিল্লি।




