অস্ত্র ব্যবসায়ী ফয়সাল কবীর। ২৮ অক্টোবর বিমানবন্দরের ভল্ট থেকে চুরি করা অস্ত্রের মধ্যে ছিল তার আমদানিকৃত অস্ত্রও।
ফয়সাল কবীর বলেন, ‘এখনো অবধি ১৮টি এয়ার রাইফেল, একটা এয়ার পিস্তল, ২০ হাজার পিস্তলের গুলি আর ১ লাখ ৭৭ হাজার এয়ার রাইফেল-এয়ার পিস্তলের গুলি পাওয়া যাচ্ছে না।’
পরবর্তীতে কিছু অস্ত্রের খোঁজ মিললেও এখনো পাওয়া যায়নি বেশিরভাগের হদিস। আর যেগুলোরও বা খোঁজ মিলছে বলা হচ্ছে, সেগুলো এখনো বুঝে পাননি তিনি। মাস পেরিয়ে গেলেও এরকম অনিয়ম-বিশৃঙ্খলায় ভুক্তভোগী আঙুল তুলছেন বিমান বাংলাদেশের দিকে।
ফয়সাল কবীর আরও বলেন, ‘যেহেতু কাস্টমসের কোনো আপত্তি নেই আমার মাল ডেলিভারি নিতে, অনাপত্তিপত্র ওনারা দিয়ে দেয়। পরে বিমানের কাছে আবেদন করি আমার মাল ডেলিভারি দেয়ার জন্য। সেটা আজ অবধি বিমান আমাকে দিতে পারেনি। বলা যেতে পারে, ১০০ ভাগ এটা বিমানের অবহেলার কারণে ঘটছে।’
ভল্ট থেকে চুরির ৩২দিন পর বিমানবন্দর থানায় মামলা করে বিমান বাংলাদেশ। যেখানে উল্লেখ করা হয় ৬টি পিস্তল ও ১টি রিভলভার চুরি হয়েছে বিমানবন্দরের ভল্ট থেকে।
ক্যামেরায় সরাসরি কথা না বলে বিমানবন্দর থানার এক কর্মকর্তা জানান, ভল্ট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আর পণ্যের বিস্তারিত সব তথ্য কেবল বিমান বাংলাদেশ ও কাস্টমস হাউজের কাছেই থাকে। সেক্ষেত্রে তদন্ত সাপেক্ষে বেরিয়ে আসবে বাকি তথ্য।
তিনি বলেন, ‘ভল্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ মালামাল সেখানে থাকে। ভল্টের দায়িত্বে থাকে বিমান। আবার ভল্টে কী কী যাচ্ছে না যাচ্ছে সেই ডকুমেন্টস থাকবে কাস্টমসে।’
আরও পড়ুন:
এ বিষয়ে কাস্টমস কতৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দাবি করেন, রাজস্ব ফাঁকি হলে তাদের দায় থাকতে পারে কিন্তু ভল্ট থেকে কোনো কিছু হারানোর সঙ্গে জড়িত নয় কাস্টমস।
ঢাকা কাস্টমস হাউজের জয়েন্ট কমিশনার মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘অস্ত্রের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সংস্থার এনওসি বা পারমিশন লাগে। সেগুলো আমরা ভেরিফাই করি, চেক করে দেখি এবং একইসঙ্গে অস্ত্রের যে শুল্ক-করাদি, সেটা আদায় করা হয়। এই অংশটা কাস্টমসের দায়িত্ব। এর বাইরে বাকি অংশটা অন্য সংস্থা দেখবে স্বাভাবিকভাবেই। সেটা কোথায় রাখছে বা তার নিরাপত্তা কী সেখানে কাস্টমসের সত্যিকার অর্থে কোনো ভূমিকা থাকার কথা নয়, নেইও।’
বিমান আমদানি কার্গো নিরাপত্তা কর্মসূচির চুক্তিতে দেখা যায় স্ট্রং রুমসহ অন্যান্য গোডাউনে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে বিমান বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু তারা বলছেন যেকোনো পন্য খালাসের সময়সীমা সর্বোচ্চ ১ মাস থাকে তারপরও ৪-৫ বছর আগের অস্ত্র স্ট্রং রুমে পরে থাকার জন্য কাস্টমস কতৃপক্ষই দায়ী।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম বলেন, ‘এতদিন কিন্তু ভল্টে পড়ে থাকার কথা নয়, এটা তো ব্যাংক নয় যে, ওনারা ভল্টে রেখে দেবে জিনিসগুলো। এগুলো নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল অনেক আগেই।’
এছাড়াও কার্গো টার্মিনালের অগ্নিকাণ্ডের পেছনেও কাস্টমসের গাফিলতি আছে বলে মনে করেন বিমান বাংলাদেশ কতৃপক্ষ।
গত ১৮অক্টোবর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালে আগুন তার ১০ দিন পর ভল্ট থেকে অস্ত্র চুরি এরও ২০ দিন পর সিনেমাটিকভাবে ভল্টের একই জায়গায় কিছু অস্ত্র ফিরে পাওয়া। সব কিছু মিলিয়ে কাস্টমসের ঘাড়েই দোষ চাপানোর চেষ্টার অভিযোগ মিলছে বিমান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।




