এটি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এখানেই কয়েকবছর আগে নির্মাণ করা হয় ফুটওভার ব্রিজ।
প্রধান গেটের মাত্র ৫০ গজের মধ্যে ফুট ওভার ব্রিজ থাকলেও সিলেট -সুনামগঞ্জ হাইওয়ের ব্যস্ততম সড়কটিতে প্রায়ই ঝুঁকি নিয়ে পার হতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
সিলেট মহানগরীর ব্যস্ততম টিলাগড়, বন্দরবাজার, শাহপরাণ ও কদমতলী এলাকায় ও পথচারী পারাপার সেতু থাকলেও পথিকের চিহ্ন খুব কমই জোটে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ওভারব্রিজ গুলোতে। এতে সড়কে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির পাশাপাশি নগরীতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে যানজট। তবে ব্রিজ ব্যবহারে কারিগরি ত্রুটির পাশাপাশি নিজেদের ও সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
নির্মাণের পর থেকেই এসব সেতু ব্যবহারে আগ্রহ নেই নগরবাসীর। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রচারকাজ ছাড়া কোটি কোটি ছাড়া খরচ করে বানানো ব্রিজগুলোতে যেন কাজের চেয়ে এখন অকাজই হয় অনেক বেশি ।
নির্মাণ ত্রুটি আর সঠিক পরিকল্পনার অভাবের পাশাপাশি জনসচেতনার অভাবে নির্মাণের ১০ বছর পর ও অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে সিলেটের প্রায় সবকয়টি ফুট ওভার ব্রিজ। যার ফলে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি এই ফুট ওভার ব্রিজ গুলোই হয়ে পড়ে মাদক,ছিনতাই সহ নানা অসামাজিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু।
পথচারীরা জানান, কষ্ট হলেও ব্রিজের নিচ দিয়েই রাস্তা পার হন যাত্রীরা। ব্রিজ দিয়ে পার হতে চান না যদি তার কোনো ক্ষতি করা হয় এই ভয়ে।
আরও পড়ুন:
নগরবিদরা বলছেন, ব্রিজ নির্মাণের আগে সঠিক পরিকল্পনার ঘাটতি, যথাযথভাবে জরিপ না করে ব্রিজের স্থান নির্বাচন এবং বাস্তবতার সাথে নাগরিকদের চাহিদার মিল না থাকায় এসব ব্রিজ অব্যবহৃত থাকছে। এছাড়াও, ফুট ওভার ব্রিজ ব্যবহারে সচেতনতার ঘাটতিকেও দায়ী করছেন তারা।
সিলেট সেন্টার বাংলাদেশ স্থপতি ইনষ্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি রাজন দাস বলেন, ‘তখন কিন্তু লোকজন বাধ্য হয়ে এটা ব্যবহার করবে। ট্রাফিক বেড়ে যাবে। এখন হয়তো করছে না। কারণ দীর্ঘদিনের অভ্যাস। আগের রোড তো ছোট ছিলো। মানুষের অভ্যাস গড়ে ওঠার জন্য সময় লাগে। এই সময়টা যাতে কম লাগে তার জন্য দরকার সচেতনতা।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মো. জহির বিন আলম বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমি সচেতন না হবো যে এখান দিয়ে চলাচল করলে আমার এক্সিডেন্ট রেট কমে যাবে, আমি সেইফ থাকবো এই বোধ যেহেতু আমাদের জাগ্রত হয় হি, এটাও একটা কারণ।’
এদিকে , ব্রিজ নির্মাণে কারিগরি ত্রুটি কিংবা পরিকল্পনার অভাব নয় বরং ব্রিজ ব্যবহার না করার মূল কারণ নাগরিকদের অনীহা বলছে সিসিক কর্তৃপক্ষ।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাই রাফিন সরকার বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজ ওইজায়গায় ব্যবহার হতে পারে এজন্য এসএমসি এবং সিটি করপোরেশন এবং মিডিয়া সবাই মিলে মানুষকে একটু উদ্বুদ্ধ করলে, মোটিভেট করলে এটা ব্যবহার হবে।’
চাহিদার সাথে বাস্তবতার অসামঞ্জস্য আর মানুষের অসচেতনতায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অনেকটা অকেজো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ওভারব্রিজ গুলোকে কাজে লাগাতে কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবী।



