যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরাইলি হামলায় গাজায় প্রতিদিন ২ শিশুর মৃত্যু: ইউনিসেফ

সারি করে রাখা হয়েছে গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত শিশুদের মরদেহ
সারি করে রাখা হয়েছে গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত শিশুদের মরদেহ | ছবি: সংগৃহীত
0

যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় প্রতিদিন গড়ে গাজার দুই শিশু হত্যার শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। এমনকি সব মিলিয়ে অন্তত ৪০০ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ইসরাইল। যার কারণে ট্রমার মধ্য দিয়ে এখনও জীবন কাটছে শিশুদের। সরবরাহ চলমান থাকলেও লাখ লাখ গাজাবাসী এখনও সহায়তার অপেক্ষায় বলে জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।

১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকেই নানা অজুহাতে শান্তি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। রেহাই পাচ্ছে না অবুঝ শিশুরাও। এ তালিকায় আছে বৃহস্পতিবার বিমান হামলায় নিহত খান ইউনিসের এক নবজাতক কন্যাশিশুও। এতে এক মাসেই ৬৭ শিশুর প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

সবমিলিয়ে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ২৮০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬৭২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর ২০২৩ সালে অক্টোবরে শুরু করা ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহত ও আহত শিশুর সংখ্যা ৬৪ হাজার বলেও দাবি জাতিসংঘের।

ইউনিসেফ মুখপাত্র রিকার্ডো পাইরেস বলেন, ‘খান ইউনিসে বিমান হামলায় এক শিশুকন্যা নিহত হওয়ার আগের দিন ৭ শিশু নিহত হয়েছে, যা যুদ্ধবিরতির সময় ঘটেছে। এটি অত্যন্ত বিস্ময়কর। যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকাকালীন কমপক্ষে ৬৭ জন শিশু নিহত হয়েছে। আরও অনেক শিশু আহত হয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গড়ে প্রতিদিন দুইজন শিশু নিহত হচ্ছে।’

ইসরাইলি আগ্রাসনে এখনও নিরাপদ আবাসন, স্কুল ও খেলার কেনো মাঠ নেই গাজায়। এমন পরিস্থিতিতে এখনও ট্রমার মধ্য দিয়ে জীবন পার করছে গাজার শিশুরা।

গাজার এক ভুক্তভোগী শিশু বলেন, ‘সাধারণ শৈশব যাপনের পরিবর্তে, আমাদের মৃত্যু আতঙ্কে জীবন কাটাতে হচ্ছে। সংকটে পানি-খাবার ও জ্বালানি সংগ্রহে বিভিন্ন সাহায্য কেন্দ্রে ছুটতে হচ্ছে। আমরা বিশ্বের অন্যান্য শিশুদের মতো একটি স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে চাই ‘

আরও পড়ুন:

আরেকজন বলেন, ‘আমি আবার আমার স্কুলে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু যুদ্ধবিরতির মধ্যেও আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারিনি। মাঠে গিয়ে খেলতেও পারছি না।’

এদিকে যুদ্ধবিরতির মধ্যেও তথাকথিত ইয়েলো লাইনের আরও ৩০০ মিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে ইসরাইলি বাহিনী। ফলে গাজাবাসীর জীবন আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সবমিলিয়ে ১০ অক্টোবর থেকে অন্তত ৪০০ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ইসরাইল। এতে নিরাপদ ভাবা পরিবারগুলোও এখন বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। উপত্যকাটির ৮০০টিরও বেশি পয়েন্টে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত বলে তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘ।

এমন পরিস্থিতিতে গাজার কিছু অংশে কমপক্ষে পাঁচ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হচ্ছে বলে তথ্য তুলে ধরেছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি-ডব্লিউএফপি। লাখ লাখ মানুষের জরুরি খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন বলেও জানানো হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতির পর খাদ্য সরবরাহ বাড়ানোর পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি। ১০ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ডব্লিউএফপি'র ৪০,০০০ টন খাদ্য সহায়তা পৌঁছেছে গাজায়।

ফিলিস্তিনের ডব্লিউএফপি মুখপাত্র মার্টিন পেনার বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির আগের তুলনায় পরিস্থিতি এখন কিছুটা ভালো। কিন্তু আমাদের এখনও অনেক দূর যাওয়া বাকি আছে। পরিবারগুলোকে তাদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জীবিকা এবং জীবন পুনর্নির্মাণে সাহায্য করার জন্য টেকসই সহায়তা আগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ছাড়াও অধিকৃত পশ্চিমতীরে দখলদারিত্ব অভিযানের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। গতকালও (শুক্রবার, ২১ নভেম্বর) রামাল্লার কাছে দুই ফিলিস্তিনি কিশোরকে হত্যা করেছে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী।

এসএইচ