তাইওয়ানকে চীন কবজা করতে চাইলে টোকিয়ো চুপ করে বসে থাকবে না; ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির এমন বিবৃতির পর থেকে জাপান-চীন উত্তেজনার পারদ ক্রমেই বাড়ছে। তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বেইজিং-টোকিওর মধ্যকার কূটনীতি ও বাণিজ্য সম্পর্ক।
এ আওতায় নিজ দেশের নাগরিকদের জাপান ভ্রমণ করতে দিচ্ছে না চীন। ১৫-১৭ নভেম্বর পর্যন্ত জাপানগামী ফ্লাইটের প্রায় ৫ লাখ টিকিটও বাতিল করেছে বেইজিং। এমনকি সিনেমা হলগুলোতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জাপানি সিনেমা প্রদর্শনী। এছাড়া জাপানি সামুদ্রিক খাবার আমদানিতে আবারও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে চীন। এমন পরিস্থিতিতে চীনে থাকা জাপানি রেস্তোরাঁ মালিকরা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। হুমকিতে জাপানের পর্যটন খাতও।
মালিকদের একজন বলেন, ‘জাপান-চীন সম্পর্ক খারাপের খবর আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। সামুদ্রিক খাবার আমদানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞায় আমাদের রেস্তোরাঁ ব্যবসা হুমকিতে পড়েছে।’
আরও পড়ুন:
আরেকজন বলেন, ‘আমি বেশ কয়েকবার জাপান এবং চীনের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক আমার মনে সাহস যোগাচ্ছেন। তাই চীনে এখনও ব্যবসা চালিয়ে নেয়ার কথা ভাবতে পারছি।’
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) মধ্যাহ্নভোজে জাপানি খাবার সুশি খেয়ে জাপানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে। অন্যদিকে তাইওয়ান ইস্যুতে জাপানের দেয়া বিবৃতি প্রত্যাহার করে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। না হলে জাপানকে পরিণতি ভোগে করতে হবে বলে হুঁশিয়ারও করা হয়েছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মুখপাত্র হে ইয়ংকিয়ান বলেন, ‘সম্প্রতি, তাইওয়ান ইস্যুতে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য চীন-জাপান সম্পর্ককে ক্ষুণ্ন করেছে। দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বিনিময় এবং সহযোগিতা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই জাপানকে ইতিহাস এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতি দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে মন্তব্য এবং পদক্ষেপ প্রত্যাহার করতে চীন আহ্বান জানাচ্ছে। তবে জাপান যদি আরও ভুল পথে চলতে থাকে, তবে চীন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। যার ফলে উদ্ভূত সমস্ত পরিণতি ভোগ করবে জাপান।’
এখন বড় প্রশ্ন হলো, চীনের হুমকিতে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে কী তাইওয়ানের পাশ থেকে সরে দাঁড়াবে জাপান? এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাপান-চীন কূটনৈতিক উত্তেজনা সবে মাত্র শুরু হচ্ছে। যা সহসাই কমার সম্ভাবনা নেই।
রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক স্টিফেন নাগি বলেন, ‘আসলে, আমি মনে করি উত্তেজনা সবে মাত্র শুরু। চীন জাপানের উপর যে চাপ প্রয়োগ করতে চাইছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই বোঝা যাচ্ছে। তাই চীনের কারণে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক বন্ধু দেশ জাপানে ভ্রমণ বুকিং বাড়াতে কাজ শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছে। এমনকি জাপানও তার বাজারকে বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা করছে।’
১৮৯৫ সাল থেকে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত তাইওয়ান শাসন করেছিল জাপান। এরপর থেকে চীন তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে আসায় নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে টোকিও। জাপান মনে করে, তাইওয়ানকে পুরোপুরি কবজায় নিতে পারলে তাদেরও নিশানা করতে পারে বেইজিং।





