শুল্ক বৃদ্ধি ইস্যুতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে নেমে ধুঁকছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রই। ভোগ্যপণ্যের সামগ্রিক খরচ ২.৭% বাড়ায় মার্কিনিদের মাঝে ক্ষোভ ও উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে। ভার্জিনিয়া, নিউ জার্সি এবং নিউইয়র্ক সিটির সাম্প্রতিক স্থানীয় নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ধারাবাহিক জয়কে এর বড় প্রমাণ হিসেবেও মনে করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামল দিতে কফি, গরুর মাংস, কলা এবং কমলাসহ ২০০ টিরও বেশি খাদ্যপণ্য আমদানির উপর শুল্ক তুলে নিতে বাধ্য হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি শুল্ক থেকে পাওয়া রাজস্ব থেকে আগামী বছর এককালীনভাবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মার্কিনিদের দুহাজার ডলার করে সহায়তা দেয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তবে পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে শুল্কনীতি নয়; বরং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতিমালাকে দায়ী করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘যখন আমি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের প্রত্যেককে ২,০০০ ডলার দেবো, তখন ধনীরা ছাড়া সবাই এটা পাবেন। এই টাকা শুল্কের কারণে অন্য দেশ থেকে আসে। এছাড়া বাইডেন এবং অন্যদের কারণে আমাদের ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ আছে। তাই আমরা দেশে এমন লভ্যাংশ যোগ করতে যাচ্ছি, যা মানুষ উপভোগ করবে। ব্যয় করবে এবং যা ইচ্ছা তাই করবে। আমরা ঋণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে যাচ্ছি।’
২০০টিরও বেশি খাদ্যপণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার চূড়ান্ত করতে আর্জেন্টিনা, সুইজারল্যান্ড, ইকুয়েডর, গুয়াতেমালা ও এল সালভাদর থেকে আমদানি হওয়া খাদ্যপণ্যে শুল্ক না বসানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বছর শেষ হওয়ার শেষের আগেই আরও বেশ কয়েকটি দেশের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের কথা ভাবছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। এ তালিকায় আছে কফির শীর্ষ সরবরাহকারী ব্রাজিলও। এরইমধ্যে শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের যাবতীয় পণ্যে ৩৯ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার ঘোষণেও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুন:
এ আওতায় হওয়া নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে সুইজারল্যান্ডের কোম্পানিগুলোকে ২০২৮ সালের শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রকে ৫০০ টন গরুর মাংস, এক হাজার টন বাইসনের মাংস এবং এক হাজার ৫০০ টন মুরগির মাংস দিতেও রাজি হতে হয়েছে সুইজারল্যান্ডকে।
জেনেভা চেম্বার অফ কমার্সের ডিরেক্টর জেনারেল ভিনসেন্ট সুবিলিয়া বলেন, ‘এটি সুইস এবং জেনেভা অর্থনীতির জন্য একটি স্বস্তির খবর। এতদিন শাস্তিমূলক শুল্কের কারণে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। তাই আমি বলবো, আবারও সুইস অর্থনীতিতে সু-বাতাস বইছে।’
এদিকে শুক্রবার হওয়া বাণিজ্য আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থেকে চীন এখন সয়াবিন এবং অন্যান্য কৃষি পণ্য কিনবে বলে প্রত্যাশা ট্রাম্পের। বেইজিং ইতোমধ্যে ক্রয় শুরু করে দিয়েছে বলেও আশা করছেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা আজ তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সামান্য কিছু নয়, বরং প্রচুর সয়াবিন কেনার জন্য প্রস্তুত। ক্রয় করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এটি শুরু হচ্ছে। তারা প্রচুর সয়াবিন কিনবে।’
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার প্রায় আড়াই মাসের মাথায় বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশের ওপর শুল্ক বাড়ান ট্রাম্প। এর ফলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ধীরে ধীরে যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।





