গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পাকিস্তানের ইসলামাবাদের জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে বোমা হামলায় ১২ জন নিহত হয়। আহত হয় ২৭ জন। হামলার সময় আদালতে সামনে বিচারক, আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমাগম ছিল। হামলার পরদিনও আতঙ্ক কাটেনি আদালত পাড়ায়। গেল এক দশকের মধ্যে দেশটির রাজধানীতে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে এটি সবচেয়ে বড় হামলা।
স্থানীয়দের একজন বলেন, ‘আরেকজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী যদি আদালত ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতো, তাহলে হতাহতের সংখ্যা দেড় থেকে দুই হাজার ছাড়িয়ে যেত।’
এ ঘটনায় ভারতের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি জানান, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলাটি চালানো হয়।
হামলার পরদিনই দায় স্বীকার করে পাকিস্তানের নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি। বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি দাবি করেছে, পাকিস্তানে ইসলামবিরোধী আইল চালু থাকায়, বিচারক, আইনজীবী ও আদালতে কর্মকর্তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ পাকিস্তানে ইসলামী শরিয়া আইন কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত হামলা চালিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়ে রেখেছে গোষ্ঠীটি।
চলতি বছরেই পাকিস্তানে ৬ শতাধিক হামলা চালিয়েছে টিটিপি। যার বেশিরভাগই হয়েছে আফগান সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে। সম্প্রতি টিটিপির সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের অস্থিতিশীলতা দেশটিকে নিরাপত্তা সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ইসলামাবাদের অভিযোগ, টিটিপি যোদ্ধাদের আশ্রয় ও সশস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে আফগানিস্তান। প্রশিক্ষণ নিয়ে কাবুল থেকে পাকিস্তানে হামলার নীলনকশা তৈরি করছে তারা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে তালেবান সরকার।
আরও পড়ুন:
গেল মাসে, সীমান্তে মারাত্মক সংঘর্ষে জড়ায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। এরপর কয়েক দফায় শান্তি আলোচনার পর সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত কার্যকর চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ দুই দেশ। এদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলছেন টিটিপির হামলা প্রমাণ করেছে, কাবুলের শাসকদের সঙ্গে আলোচনা করে ফায়দা নেই।
ইসলামাবাদে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। হতাহত পরিবারের প্রতি শোক জানিয়ে ঘটনার পূর্ণ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
জাতিসংঘের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব এই আত্মঘাতী হামলার ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছেন। হতাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে জাতিসংঘ থেকে। সন্ত্রাসবাদে জড়িত সব অপরাধীদের জবাবদিহি করতে হবে এবং প্রতিটি ঘটনার পূর্ণ তদন্তের আহ্বানও জানিয়েছে জাতিসংঘ।’
মে মাসে ভারতের সঙ্গে চারদিনের যুদ্ধের পর অক্টোবরে আফগানিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় পাকিস্তান। প্রতিবেশী দুই দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের চলমান অস্থিরতায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে পুরো অঞ্চলে।




