তফসিলের আগেই রাজধানীজুড়ে ব্যানার-ফেস্টুনের ‘বন্যা’, নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সিটি করপোরেশন

রাজধানীতে ব্যানার-পোস্টার টাঙানো | ছবি: এখন টিভি
0

সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই রাজধানীর সড়ক-অলিগলি থেকে সব খানেই ছেয়ে গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টার। এসব নিয়ন্ত্রণে বাধা পাওয়ার কথা জানালো সিটি করপোরেশন। তবে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি নগর কর্তৃপক্ষের। আর নির্বাচনি প্রচারণায় প্রার্থীদের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে সৃজনশীল প্রচারণায় জোর দেয়ার পরামর্শ নগর পরিকল্পনাবিদের।

এখনো ঘোষণা হয়নি তফসিল। ভোটের দিনক্ষণও হয়নি চূড়ান্ত। এর আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে ঢাকার দুই সিটি।

রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নীতিনির্ধারণীদের আইন অমান্যের এ মহোৎসবে আক্রান্ত রাজধানীর সড়ক-অলিগলি থেকে মেট্রোরেলের পিলার, ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। মানা হয়নি পোস্টারের কোন নির্দিষ্ট আকারও। পোস্টারের জঞ্জালে বাদ যায়নি চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি-চিহ্নও। চারদিকেই যেন দৃষ্টি দূষণের প্রতিযোগিতা এ নিয়ে নগরবাসী বিরক্ত।

স্থানীয়রা জানান, পোস্টার ব্যানার দিয়ে তারা নগরকে অসুন্দর করে তোলে। একজন ভোটার হিসেবে তাদের দাবি ভোটার প্রার্থীদের ব্যানার পোস্টার সীমিত আকারে টাঙায় যেন। পোস্টার নাঙানোর বিকল্প হিসেবে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের পরামর্শও দেন তারা।

অথচ নির্বাচনি প্রচারণায় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিতে ইসি এবার পোস্টারের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রেখেছে। বিলবোর্ড ব্যবহারও সীমিত করা হয়েছে। আর আগের দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ অনুযায়ী পোস্টার ব্যবহারেও নিয়মাবলী রয়েছে। কিন্তু ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যেকোনো সময়ের চেয়ে নির্বাচন ঘিরে প্রচার প্রচারণা প্রার্থীদের পোস্টার ছাপানোর মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তফসিল ঘোষণার আগে প্রার্থীর প্রচারণায় ইসির আচরণবিধি মানার বাধ্যবাধকতা না থাকার সুযোগ নিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।

আরও পড়ুন:

নির্বাচন বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার আগেই রাজনৈতিক দলগুলো অনেক টাকা খরচ করে ফেলছে। দ্বিতীয়ত ২০১২ সালে আইন অনুযায়ী এগুলো অবৈধ। তাই এখনি যথাযথ কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া দরকার।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘পরিবেশ ধ্বংস করে দৃষ্টি দূষণ করে মানুষকে বিরক্ত যদি শুরুতেই করেন, তাহলে কীভাবে পরবর্তীতে জনপ্রতিনিধি হলে মানুষের ভালোবাসা অর্জনের জন্য সঠিক কাজটি করবেন। প্রচারণার ক্ষেত্রে জনবান্ধব ও কৌশলবান্ধবভাবে করতে হবে।’

বছরব্যাপী এসব অপসারণে বিভিন্ন কার্যক্রম হলেও সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বাধার পাচ্ছে সিটি করপোরেশন। রাজনৈতিক এই চাপ গত ১ মাসে অতিমাত্রায় বেড়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এ বি এম সামসুল আলম বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই এ কাজগুলো করছি। তবে আমরা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বাধার মুখোমুখি হচ্ছি। রাজনৈতিক দলগুলোসহ যারা ব্যানার পোস্টার লাগাচ্ছেন তাদের আমরা চিঠি দেব যেন তারা আর না লাগায়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে সিটি করপোরেশন থেকে কেন্দ্রিয়ভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রয়োজনে আমরা পত্র যোগাযোগ করব। তাদের অনুরোধ করব তারা যেন সরিয়ে নেয়। তারপর তারা সরিয়ে না নিলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

নিরাপদ ও সমৃদ্ধ শহর গড়ার প্রত্যয়ের বার্তা ছড়ানো রাস্তার মোড়ে মোড়ে এসব পোস্টার-ব্যানার-বিলবোর্ডে প্রচারের চেয়ে জনমনে ক্ষোভের পাল্লা করছে ভারী। নগরীর আগামীর নীতিনির্ধারকদের নির্বাচনি প্রচারণায় গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিবেন সেই প্রত্যাশা সকলের।

এফএস