সিটি গ্রুপসহ তিন শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন কেনার ঘোষণা

চুক্তি স্বাক্ষরের সময়
চুক্তি স্বাক্ষরের সময় | ছবি: এখন টিভি
2

সিটি গ্রুপসহ দেশের শীর্ষ সয়াবিন প্রক্রিয়াজাতকারী তিন প্রতিষ্ঠান- আগামী এক বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের সয়াবিন কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এমন সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চমানের কৃষিপণ্যের ক্রমবর্ধমান প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন দু'দেশ। আমদানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন বিক্রি আগামী বছরে তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে।

দেশে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। সে হিসাবে মাসে প্রয়োজন দেড় লাখ টন। আর টিসিবির হিসেবে বছরে চাহিদা ২৪ লাখ টনের। চাহিদা মেটাতে কয়েকটি কোম্পানি বছরে ৩০ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করে থাকে।

বাংলাদেশের তিনটি শীর্ষ সয়াবিন প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান-মেঘনা, ডেল্টা আ্যাগ্রো এবং সিটি গ্রুপ আগামী এক বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের সয়াবিন কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল সাথে বনানীর শেরাটন হোটেলে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে গ্রুপগুলো।

আরও পড়ুন:

এ চুক্তি বাংলাদেশের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চমানের কৃষিপণ্যের ক্রমবর্ধমান প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য আফেয়ার্স ট্রেসি জ্যাকবসন, ইউএসএসইসির নির্বাহী পরিচালক কেভিন এম রোপকি; মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা; সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হাসান; ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক; স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়সহ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইউসেকের নির্বাহী পরিচালক কেভিন এম রোপকে বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।’

ব্যবসায়ীরা বলেন, এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন বিক্রি আগামী বছরে তিনগুণ বৃদ্ধি পাবে। এতে দুদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।

সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহব্যবস্থায় গুণগত মান বজায় রাখা ও তা টেকসই করে তুলতে আমরা সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা উচ্চমানের মার্কিন সয়াবিনের ব্যবহার বাড়াতে চাই। এতে ভোক্তাদের কাছে উন্নতমানের পণ্য পৌঁছে দেওয়া যাবে। তাতে দেশের ক্রমবর্ধমান প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে। এই এলওআই দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তি বিনিময় এবং কৃষি উদ্ভাবন ও অগ্রগতির নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।’

ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি আমিরুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের মান সব সময়ই অন্যদের চেয়ে ভালো থাকে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনবীজের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। আমাদের সামনে আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা চাইলে বাংলাদেশে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য–ঘাটতি রয়েছে। আমরা এলপিজি, অপরিশোধিত তেল ও সয়াবিন আনতে পারলে দুই দেশের মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে।’

মেঘনা গ্রুপের পরিচালক তানজিমা বিনতে মোস্তফা বলেন, ‘আমরা গর্বিত যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের খাদ্য ও পশুখাদ্যের সরবরাহব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার অংশীদারত্বে যুক্ত হতে পেরেছি। গত এক বছরে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছি। এ বছর মেঘনা গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০ লাখ টন সয়াবিন আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে সেই লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেন, ‘বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুদেশের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আশা করছেন, আগামী দিনেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’

ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের বাণিজ্য যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা প্রায় বন্ধ করেছে চীন। এতে বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কম দামে সয়াবিন আমদানির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

সেজু