দেখে সত্য মনে হলেও কিছু ভিডিও আসলে নকল ও এআই জেনারেটেড। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর এমনসব ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
কিন্তু প্রচারণার বাইরেও এমন সব ভিডিও রয়েছে যেখানে চালানো হচ্ছে অপপ্রচার। ভুল তথ্য কিংবা গুজবও ছড়ানোর মাধ্যম হয়ে উঠছে এসব ভিডিও। এতে সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা কঠিন হচ্ছে, কোনটি আসল আর কোনটি নকল।
এসব ভিডিও তৈরি হয় কীভাবে? লার্নিং বাংলাদেশ নামক প্রতিষ্ঠানে ডিজাইন, অ্যানিমেশনসহ এআই কনটেন্ট তৈরি ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার দেখালেন চ্যাটজিপিটি বা এআইসহ নানা সফটওয়্যার দিয়ে প্রম্পট তৈরি করে খুব সহজেই তৈরি হচ্ছে ভিডিও।
লার্নিং বাংলাদেশের সিইও সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আমার ভোট আমি দিয়েছি আর আমার সঙ্গে পুরো এলাকার মানুষ, এবার নির্বাচনে আমরা জয়ী হবোই— এটা হচ্ছে ডায়ালগ। এটা দিয়ে একটা ভিডিও বানাবো, সে আমাকে একদম ডিটেইলে প্রম্পট লেখে দিচ্ছে। গুগলে দিয়ে দিলেও এটা বানিয়ে দেবে।’
এসব ভিডিও তৈরিতে নির্ধারিত সফটওয়্যারে ভোট কিংবা নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু নীতিমালা থাকলেও প্রম্পটের শব্দগত পরিবর্তন করে খুব সহজেই গুজব বা অন্যের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো সম্ভব হচ্ছে।
সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘টেক্সট দিয়ে একটা ভিডিও জেনারেট করে ফেলতে পারছেন। হয়তো এটা নতুন এনভায়রনমেন্ট। বা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ একই আছে।’
এমন বাস্তবতায় আগামী নির্বাচনে এমন অপপ্রচার রোধ করা কতোটা সম্ভব। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, এটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই কাজ করছেন তারা।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘এটা একটা কমন সমস্যা। আমরা বলেছি আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। কী কাজ করছি সেটা বলেছি, যদি এ ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা লাগে তাহলে আমরা চাইবো।’
কিন্তু এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই নির্বাচনে এআইয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে যত আলোচনা তা রোধে এখনও সরকারের তেমন প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না। এ প্রযুক্তিবিদ জানালেন, এমন সব মারাত্মক গুজব এআইয়ের মাধ্যমে ছড়ানো সম্ভব যা শুধু কয়েকটি কেন্দ্রেই নয় পুরো নির্বাচনকেই ভণ্ডুল করে দিতে পারে। তার পরামর্শ নির্বাচনের দিন বা আগে ইসিকে এমন একটি ওয়েবসাইট লঞ্চ করতে হবে, যাতে দ্রুতই কোনটি এআই কন্টেন্ট সেটা বুঝতে পারে সাধারণ মানুষ। এতে বিদ্যুতের গতিতে ছড়ানো ভুল তথ্যও ঠেকানো সম্ভব হবে।
প্রযুক্তিবিদ সুমন সাবির বলেন, ‘ব্যক্তিগত জায়গা থেকে করতে হবে, প্রতিষ্ঠানের জায়গা থেকে করতে হবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা নীতিমালা বা গাইডলাইন থাকা উচিত যে আসলে কোন কোন জায়গায় আমরা এভাবে ব্যবহার করবো আর কোন কোন জায়গায় আমরা করবো না। বা সব দল মিলে যদি একটা ঐকমত্যে পৌঁছায় যে, মরা এ নির্বাচনের সময়কালীন, এ ধরনের প্রচারণা করবো না। বা এআই বেসড অডিও ভিডিও আমরা ব্যবহার করবো না।’
আগামী নির্বাচন ঘিরে এআইয়ের ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করেছে নির্বাচন কমিশন। আর এআই দিয়ে কোনো অপরাধমূলক কাজ করলে ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছে কমিশন। কিন্তু সে শাস্তির প্রক্রিয়া কেমন হবে বা অপরাধীদের কীভাবে আইনের আওতায় আনা যাবে সেটা এখনও স্পষ্ট করেনি নির্বাচন কমিশন। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন শুধু কেন্দ্রীয়ভাবেই নয়, একেবারে জেলা পর্যায়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে এসব অপরাধীদের ধরা গেলে হয়তো আগামী নির্বাচন অনেকটাই স্বচ্ছ হবে।




