২০২২ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে আসেন রুমান। দেশে রাজনৈতিক ভিন্ন মতের কারণে জীবননাশের আশঙ্কায় দশ মাস পর তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন।
শরণার্থী আবেদনকারী সুহরাব উদ্দিন রুমান বলেন, ‘যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতারা আমাদের বাড়িতে হামলা করে। তারপর আমি বাধ্য হয়ে শরণার্থীর আবেদন করেছি।’
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের পেছনে অন্যতম কারণ ছিলো উল্লেখযোগ্যভাবে অ্যাসাইলাম আবেদনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এক বছরে ১ লাখ ১১ হাজার অ্যাসাইলাম আবেদন হয়েছে। এরইমধ্যে ১৪ হাজার ৮০০ জনই স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আসা শিক্ষার্থী। তবে বেশিরভাগ আবেদন ছিলো ভিত্তিহীন। সরকার টেক্সট মেসেজ ও ই-মেইলের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে অ্যাসাইলাম না করতে নিরুৎসাহিত করেছে। পাশাপাশি হঠাৎ কিছু নিয়মেরও পরিবর্তন এনেছে।
সলিসিটর এমডি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পূর্বে ফ্রি অ্যাপ্লিকেশন করতে পারতো শরণার্থীরা। শুধুমাত্র রিলেশনশিপ দেখালেই নিয়ে আসা যেত। সেই সুবিধাটি গত ৪ তারিখ থেকে বন্ধ করে দিয়েছে।’
জাতীয়তার পরিচয়ে অ্যাসাইলাম আবেদনের শীর্ষে আছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ইরান আর পঞ্চম থেকে চতুর্থ অবস্থানে এখন বাংলাদেশ। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মাত্র এক বছরে স্টুডেন্ট ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসেছেন ৪ লাখ ১৪ হাজার শিক্ষার্থী। ছাত্র নেতারা বলছেন, অনেকেই কোর্স সম্পন্ন না করে স্থায়ী হতে অ্যাসাইলামের পথ বেছে নিচ্ছেন। এতে করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
ইউকে বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন সাবেক সভাপতি এমডি নাফিস ফুয়াদ নিলয় বলেন, ‘আমরা যারা সচেতনরা এ পদক্ষেপটি নিচ্ছি তাদের জানা উচিত, বোঝা উচিত যে যত বেশি অ্যাসাইলাম ক্লেইম করা হবে ভিসা রেসট্রিকশন ততো বেশি বাড়বে।’
গত জুলাই মাসে এক অ্যাসাইলাম সিকারের বিরুদ্ধে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ছড়ায়। শুরু হয় প্রবল অ্যাসাইলামবিরোধী আন্দোলন। আবার সামনে আসে হোটেলে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের বিপুল ব্যয়ের হিসাব। প্রতিদিন জনপ্রতি ১৭০ পাউন্ড মাসে প্রায় মাসে প্রায় ৫ হাজার পাউন্ড খরচ। বর্তমানে এরকম প্রায় ৩২ হাজার আশ্রয়প্রার্থী হোটেলে আছেন, আর ৫১ হাজার মামলার রায় ঝুলে আছে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশি অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে।
সলিসিটর মুফতি নাফিস বলেন, ‘৫ আগস্টের পর যারা এখানে এসেছে প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে যারা ফিরতে পারছে না এর জন্যই মূলত ৫ আগস্টের পর অ্যাসাইলাম সিকার বেড়ে গেছে।’
পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। এর ফলে অবৈধ বাংলাদেশি ও প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের দ্রুত ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য।
ব্যারিস্টার আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ‘যারা ফেইক অ্যাসাইলাম বা যাদের বৈধ ডকুমেন্ট নেই তাদের রিটার্ন দেয়ার জন্য সকল দেশের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। এখানে বাংলাদেশের সঙ্গে অলরেডি একটি চুক্তি আছে।’
গেলো বছরের জুলাইয়ে কিয়ার স্টারমার দায়িত্ব নেয়ার পর মোট ৫০ হাজার আশ্রয়প্রার্থী সাগর পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, অনিয়মিত অভিবাসীর আগমন ২৭ ভাগ বেড়েছে। অবৈধ পথে আসা অভিবাসীদের ৮৮ ভাগই চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান।





