কাঠমাণ্ডুর আকাশ ছেয়ে আছে কালো ধোঁয়ায়। সহিংসতা থামলেও থমথমে গোটা রাজধানী।
জেন-জি শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনে সরকার পতনের পর বুধবার সকালটা নেপালবাসীর জন্য ছিল একেবারেই ভিন্ন। গেল কয়েকদিনের সহিংস পরিস্থিতির পর অনেকটা শান্ত কাঠমান্ডু। বিভিন্ন স্থানে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে সহিংসতার আলামত।
নেপালের ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। চলমান অস্থিরতায় বন্ধ রয়েছে প্রায় সব বিমানবন্দরের কার্যক্রম। নেপালের সঙ্গে সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল করেছে বাংলাদেশ, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ। নেপালে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিরাপদে থাকার নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের। এরইমধ্যে কাঠমান্ডু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। আন্দোলনের মুখে বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন অনেক পর্যটক।
পর্যটকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘বিমানবন্দরে আটকা পড়ে আছি অনেক সময় ধরে। বাইরে বের হতে পারছি না। এখানে কোনো খাবারও নেই।’
এমন অবস্থায় নেপালের সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর ৬টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে কারফিউ এর সময়সীমা। লুট হওয়া অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
মঙ্গলবার রাত থেকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনা মোতায়েন করা হয়। চলমান অস্থিরতা দমাতে বিশেষ নিরাপত্তা অভিযান শুরু করেছে তারা। বিক্ষোভের সময় লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এরইমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। এদিকে, গেল দুই দিনের সহিংস আন্দোলনের সময় নেপালের ১৮টি জেলার কারাগার ভেঙে পালিয়েছে ছয় হাজারের বেশি বন্দি।
আরও পড়ুন:
নেপালের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে সেনাবাহিনী। এর আগে, জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে নেপালের সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল বিক্ষোভে হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এ সময় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
নেপালের সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল বলেন, ‘এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। সরকারি বেসরকারি স্থাপনা ও বেসকারি স্থাপনা, সাধারণ নাগরিক, কূটনৈতিক মিশন এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশকে এ উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে বের করে আনাই একমাত্র উপায়।’
নেপালে চলমান সহিংস বিক্ষোভে ২২ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি বলেন, নেপালের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে, বিক্ষোভে হতাহতদের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান ভলকার তুর্কও।
তিনি বলেন, ‘তরুণদের দাবি ও তাদের কথা শোনা গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক হতাশা এবং অভিযোগ প্রকাশ করার অধিকার তাদের রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী অপ্রয়োজনীয় ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের জরুরি, পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছেন জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো।’
জেন-জিদের আন্দোলনের মুখে সরকারের পতনের পর নতুন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় নেপাল। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির অবস্থান সম্পর্কেও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে কে আসছেন নেপালের ক্ষমতায়। তবে দ্রুত নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে এখনো কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত আন্দোলন করে যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা।





