আধিপত্য বিস্তার ঘিরে সাতদিনের ব্যবধানে গেল রোববার (১৩ এপ্রিল) শরীয়তপুরের জাজিরায় আবারও সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ। ছাব্বিশপাড়া এলাকায় ঘটানো হয় শতাধিক হাত বোমার বিস্ফোরণ।
এর আগে গত ৫ এপ্রিল দেশ জুড়ে আলোচিত হয় জাজিরা বিলাসপুরে আধিপত্য বিস্তার ঘিরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে মুহুর্মুহু হাত বোমা ব্যবহার। যেখানে দেখা মেলে বালতি ভর্তি হাত বোমা। ব্যবহার হয় ঢাল, সরকি, রামদা। যদিও স্থানীয়দের কাছে এ সব ঘটনা গত চার দশকের বিভিন্ন সংঘর্ষের খণ্ড চিত্র।
গেল বছরের ২ এপ্রিল এমনই এক সংঘর্ষে হাত বোমার আঘাতে নিহত হয় বিলাসপুর মুন্সিকান্দি গ্রামের সজিব মুন্সি। বছর পেরিয়ে স্বামীর কবরের পাশে স্ত্রী সোনিয়া আক্তারের আর্তনাদ। তার মতো অনেকেই হারিয়েছেন স্বামী, সন্তান আর প্রিয়জনকে। হাত বোমার আঘাতে শরীরে ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন শত শত মানুষ।
সজিব মুন্সির স্ত্রী বলেন, ‘কত মা সন্তান হারা হবে, কত ছেলে মেয়ে বাবা হারা হবে তার ঠিক নাই। আমার বাচ্চার বয়স চার বছর। যারা বাবা না থাকে দুনিয়াতে তার কী থাকে?? কিছুই নাই।’
হাত বোমার আঘাতে আহতদের মধ্যে একজন বলেন, ‘হাঁটতে পারিনি, চলাফেরা করতে পারিনি। বিছানায় ছিলাম। তিনমাস পর্যন্ত পা প্লাস্টার করা ছিল।’
এ সব হাত বোমা তৈরির রসদ কোথা থেকে আসে? কীভাবেই বা তৈরি করা হয় হাত বোমা? সে সবই জানাচ্ছিলেন বিলাসপুরের মুন্সিকান্দি গ্রামের আলী হোসেন মুন্সি।
তিনি বলেন, ‘ট্রলারে করে নিয়ে আসে। এনে এই নদী দিয়ে যায়, তখন নামিয়ে রাখে। তারপর পাড়ার মধ্যে ভাগ করে নেয়। নিয়ে দেড় ইঞ্চির তারকাটা ভেতরে দিয়ে বানায়।’
সহিংসতা বন্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
শরীয়তপুরের জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দুলাল আকন্দ বলেন, ‘গত ৫ তারিখে যে ঘটনাটা আপনারা দেখেছেন, সেটা আমরা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা নিয়েছি। এর মধ্যেই আমরা ১১ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
১৯৮৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে শুরু হয় হাত বোমার সহিংসতা। আধিপত্য বিস্তারে এখন এসব সংঘর্ষের নেতৃত্বে রয়েছে জাজিরার বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারী ও তার প্রতিপক্ষ জলিল মাদবর। বর্তমানে তারা দু'জনই কারাগারে। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় শতাধিক মামলা রয়েছে।