ভূমিকম্পের ভয়াবহ শঙ্কায় মিয়ানমার

বিদেশে এখন
0

পৃথিবীর দুই টেকটনিক প্লেটের সীমানায় অবস্থিত মিয়ানমার সর্বোচ্চ ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর একটি। ইউরেশিয়ান আর ইন্ডিয়ান প্লেট টেকটনিকের অবস্থান এই দেশের নিচে এতো জটিল যে, যেকোনো সময় দুই টুকরো হয়ে যেতে পারে মিয়ানমার। ভূতত্ববিদরা বলছেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জান্তা সরকারের নানা বিধিনিষেধে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত ধারণা এখনও পাওয়া যায়নি। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি হবে ভয়াবহ।

চার বছরের গৃহযুদ্ধের মধ্যে তীব্র খাদ্য সংকট আর অর্থনীতির ধসে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের জন্য শুক্রবারের (২৮ মার্চ) ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ইন্টারনেট সংযোগ আর বিদেশি সাংবাদিকের প্রবেশাধিকার আগে থেকেই সীমাবদ্ধ থাকায় হতাহতের খবর পেতেই বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তথ্য পেতে দেরি হলেও ভূকম্পনবিদরা বলছেন, এই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাটা অনেক বেশি।

আরো পড়ুন: উচ্চ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: পূর্বপ্রস্তুতি-সচেতনতা তৈরির আহবান ফায়ার সার্ভিসের

ব্রিটিশ জিওলজিক্যাল সার্ভের ভূকম্পনবিদ ড. ব্রায়ান বাপটে বলেন, ‘অনেক বড় আর শক্তিশালী ভূমিকম্প এটি, উৎপত্তিস্থল তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেই, আশপাশেও অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মান্দালে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, যেখানে ২০ লাখ মানুষের বাস। মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে উৎপত্তিস্থল থেকে। ধারণা করাই যায়, ক্ষয়ক্ষতি অনেক ভয়াবহ যা এখন পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে না।’

আরো পড়ুন: ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে

অবস্থানগত দিক দিয়ে মিয়ানমার বেশ ভূমিকম্পপ্রবণ। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় প্লেট টেকটনিক আর ইউরাশিয়ান প্লেট টেকটনিক উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বিস্তৃত, যেটি মিয়ানমারের মাঝখান দিয়ে সোজা হয়ে গেছে। মার্কিন ভূতাত্বিত জরিপ বলছে, ভারত আর ইউরাশিয়ার প্লেট টেকটনিক একটি আরেকটির বিপরীতে ঘষা লেগে সাগাইং ফল্টের কাছে এই ভূমিকম্প হয়েছে।

ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের ভূকম্পনবিদরা বলছেন, পৃথিবীর নিচে প্লেট টেকটনিকের স্তরে ফাটল ধরে তা প্রতি সেকেন্ডে দুই কিলোমিটার করে আলাদা হচ্ছে। যেই কম্পন অনুভূত হয়েছে উৎপত্তিস্থল থেকে অনেক দূরেও। ব্রিটিশ জিওলজিকাল সার্ভে বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বেশিরভাগ মানুষ আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকার কারণে ক্ষয়ক্ষতি হবে আরও ভয়াবহ।

আরো পড়ুন: ভূমিকম্পে বিপর্যস্তু মিয়ানমার-থাইল্যান্ড

ড. ব্রায়ান বাপটে বলেন, ‘সাগাইংয়ে ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থলে শত বছরে ১৪ বার ৬ মাত্রা বা তার ওপরে ভূমিকম্প হয়েছে। সাগাইংয়ে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯৪৬ সালে। মান্দালের খুব কাছে ১৯৬৫ সালে ৬.৮ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছিল। শুক্রবারের ভূমিকম্প সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়িয়ে যাবে।’

পৃথিবীর অভ্যন্তর তিন স্তরে বিভক্ত। গলিত ধাতব অংশ, এর ওপরে নিরেট পাথুরে স্তর যাকে ম্যান্টল বলে, তার ওপরের স্তরে রয়েছে ভূপৃষ্ঠের কঠিন আবরণ। যার কারণে প্লেট টেকটনিকে এতো নড়াচড়া হয়। মিয়ানমারের নিচে সাগাইং ফল্টের সোজা লাইনের ওপর অবস্থিত ১২শ' কিলোমিটারজুড়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে মান্দালে আর ইয়াঙ্গুনের বিশাল এলাকা। যে কারণে ঝুঁকিতে লাখ লাখ মানুষ।

ইএ