সঠিক পুনর্বাসন না হওয়ায় মানসিক রোগে ভুগছেন জুলাই অভ্যুত্থানের আহতরা

.
বিশেষ প্রতিবেদন
দেশে এখন
0

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি-হামলায় আহত হয়েছেন ২০ সহস্রাধিক মানুষ। যাদের মধ্যে দুই চোখের আলো ফেরার সম্ভাবনা নেই অন্তত ৩০ জনের। চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘসময় পার হওয়ার পরও সঠিক পুনর্বাসন না হওয়ায় আহতরা মানসিক রোগে ভুগছেন। এদিকে জুলাই আন্দোলনে আহতরা বলছেন, সমাজের বোঝা হয়ে নয়, যোগ্যতা এবং কর্মক্ষমতা বিবেচনায় চান উপযুক্ত কাজের সুযোগ।

ডাক্তার দেখাতে এসে গল্পে মেতেছেন জুলাই যোদ্ধারা। কণ্ঠে দুঃসহ স্মৃতি। চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বয়ে বেড়াচ্ছেন ঘাতকের ছোড়া ছররা গুলি।

স্বৈরাচার হটানোর এই আন্দোলনের আরেক নায়ক ওমর ফারুক। বগুড়া সরকারি পলিটেকনিকের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র। ৪ আগস্ট গাজীপুর আনসার অ্যাকাডেমির তিন নম্বর গেট এলাকায় গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় তার দুই চোখের আলো পুরোপুরি নিভে গেছে। জানালেন, সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চান না তিনি।

ওমর ফারুক বলেন, ‘যাদের হাত পা নেই, তারা অবশ্যই কোনো না কোনো কাজে দক্ষ বা সে কোনো কাজ পারে। আর না পারলেও তাকে ট্রেনিং দেয়া হোক। ট্রেনিং অনুযায়ী যদি তাকে সেই কাজে চাকরি দেয়া হয় বা সুযোগ দেয়া হয় বা সেই কাজে স্থানান্তর করা হয় তাহলে তার পুনর্বাসনটা যথাযথভাবে হয়ে গেলো। সে তার পরিবারের বোঝা না হয়ে নিজেকে স্বনির্ভর করে নিলো।’

শুধু ফারুকই নয়। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় কাটছে জুলাই আন্দোলনে আহতদের জীবন। চিকিৎসকরা বলছেন, আহতরা মানসিক ট্রমায় ভুগছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি সঠিক পুনর্বাসনই এর সমাধান।

জাতীয় চক্ষু ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. যাকিয়া সুলতানা নীলা বলেন, ‘উনাদের চোখের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়েছে, রেটিনা ছিড়ে গেছে, অপটিভ নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমনকি লেন্সও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ট্রমাটিক ক্যাটারিক ডেভেলপ করেছে। উনারা কিন্তু সবাই শঙ্কিত, তারা বুঝতে পারছেন যে তাদের চোখের অবস্থাটা কী। তারা পরিবারের সাথে জীবিত থাকতে, সুস্থভাবে সম্মানের সাথে থাকতে চান।’

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শহীদ পরিবার ও আহতদের আর্থিক সহযোগিতার কার্যক্রম চালাচ্ছে সরকার। নানা সীমাবদ্ধতায় সাহায্যের টাকা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ সেবাপ্রার্থীদের।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার, এইচআর ও এডমিন মো. সোহেল মিয়া বলেন, ‘আমাদের কাছে যারা আসছে আমরা তাদের সাহায্য করছি। পাঁচ হাজারের পরে যেসব পরিবারের কাছে পৌঁছে গেছি তরা কিন্তু কোনো অভিযোগ করছে না। এত বড় কটা কার্যক্রমের মধ্যে নগণ্য কিছু হতেই পারে। তবে বলবো হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের দরজা সবসময় খোলা।’

জুলাই আন্দোলনে আহদের পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসন করার কথা বলছে সরকার। তবে পুরোপুরি চোখের আলো হারানো ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যা কিছুটা জটিল।

মো. সোহেল মিয়া বলেন, ‘যারা সার্ভাইভ করতে পারবে না। তাদের জন্য আমরা বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তার মধ্যে প্রশিক্ষণ, পুনর্বাসন এবং আর্থিক নিশ্চয়তা। আমাদের তিনটা কার্যক্রমই একসাথে চলমান। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের কাছে তালিকা চেয়েছিল আমরা সেই তালিকা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জমা দিয়েছি।’

আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে কাজ করছে সরকার। একইভাবে কর্মক্ষম আহতদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবি তাদের।

এসএস