বরগুনায় অবৈধ ইটভাটায় হুমকির মুখে পরিবেশ

.
পরিবেশ ও জলবায়ু
এখন জনপদে
0

অবৈধ ইটভাটা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও উপকূলীয় জেলা বরগুনায় নিয়ম নীতি না মেনে ইটভাটা পরিচালনা করছেন প্রভাবশালীরা। সবাইকে ম্যানেজ করে চলছে অবৈধ ইটভাটার ব্যবসা। সচেতন মহল বলছেন, জরিমানার পাশাপাশি বন্ধ করতে হবে প্রাণ ও পরিবেশের শত্রু অবৈধ এসব ভাটা।

বরগুনার বেতাগী পৌরসভার সাবেক মেয়র এবিএম গোলাম কবির। বিষখালী নদীর পাড় দখল করে গড়ে তুলেছেন ইটভাটা। স্থানীয়দের অভিযোগ, জুলাই বিপ্লবের পর এই গোলাম কবির গা ঢাকা দিয়েও ব্যবসা চালাচ্ছেন আড়ালে থেকে।

অধ্যক্ষ বেতাগী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের মো. শাহীন বলেন, ‘কোন ক্ষমতার বলে তারা এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, তা আমাদের কাছে অস্পষ্ট।’

সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘এই ইটভাটা তৈরি করে সেখানে পরিবেশ দূষণ করে যাচ্ছে। গাছ পোড়াচ্ছে, সেখানে নদীর পাড়ের মাটি কেটে নিচ্ছে, সরকারি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে কিন্তু কেউ বিষয়টি দেখছে না।’

ক্ষমতার অপব্যবহার করে বীষখালি নদীর এপারে নদীর চর দখল করে দূষণের মহোৎসবে যেমন মেতেছেন ভাটা মালিকরা, ঠিক তেমনি নদীর ওপারেও অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে অনেকগুলো ইটভাটা। এসব ইটভাটার দখল ও দূষণে বীষখালি নদীর স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তন হওয়ার পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে মাছের উৎপাদন। ইটভাটার দূষণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর।

আমতলী উপজেলার মহিষকাটায় চাউলা স্কুল এবং কুয়াকাটা-আমতলী মহাসড়ক ও মাদ্রাসার পাশে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার দখলে রয়েছে ইটভাটা। বামনা উপজেলায়ও কয়েকটি ইটভাটার নুড়ি ফেলে দখল হচ্ছে নদীর চর। অনেকেই ফসলি জমির মাটি কেটে ব্যবহার করছেন ইটভাটায়।

বরগুনার ধরিত্রী রক্ষায় আমরা-এর সদস্য সচিব মুশফিক আরিফ বলেন, ‘এগুলো নিয়ে অসংখ্যবার আন্দোলন হয়েছে, রিপোর্ট হয়েছে কিন্তু কোনোকিছুতেই তো কিছু হচ্ছে না। যারা এই বিষয়গুলোর অনুমোদন দেয়, তারা নিশ্চয়ই কোনো আর্থিক সুবিধা নিয়েই এগুলো করছে।’

চাউলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জামাল উদ্দীন বলেন, ‘ভাটা থেকে যে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়, তা শিশুর বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর কীভাবে এসব ইটভাটার লাইসেন্স দিয়েছে? এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা। তবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে নেয়া হবে পদক্ষেপ।

বরগুনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হায়াত মাহমুদ রকিব বলেন, ‘আমরা একটি মোবাইল কোর্ট চালু করেছি এবং এটা অব্যাহত থাকবে।’

বরগুনার জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমাদের টিম অভিযান চালাচ্ছে এবং তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে। আমরা কয়েকটা চুল্লিও ধ্বংস করে দিয়েছি। নতুন কোনো ইটভাটার অনুমোদন আমরা দিচ্ছি না। তারপরও আপনারা যে অনিয়মের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন, সেগুলোতে অভিযান চালাবো এবং সেগুলো সত্য প্রমাণিত হলে আমরা সেগুলো বন্ধ করে দেব। ’

জেলায় অর্ধশতাধিক ইটভাটা থাকলেও চালু রয়েছে ৩৭টি, যাদের বেশিরভাগেরই বৈধ কাগজপত্র না থাকার অভিযোগ রয়েছে।

এসএইচ