ক্ষমতায় গেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে দিতে পারবেন বললেও, প্রায় এক মাস হতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে বসেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবুও যেন একটুকু কমেনি উত্তেজনার পারদ। ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযান তিন বছর পূর্ণ হতে বাকি আর মাত্র ১৭ দিন। দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা হয়ে, ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনা না করলে রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞার হুমকিতেই আপাতত আটকে আছেন ট্রাম্প।
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আদৌ থামবে কি-না তা নিয়েও শঙ্কার পাল্লা ভারি হচ্ছে। কারণ একদিকে আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দিলেও ইউক্রেনে হামলার মাত্রা যেমন বাড়ানো হচ্ছে, তেমনি ট্রাম্প ক্ষমতায় আসতে না আসতেই অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের মহড়া জোরালো করেছে পুতিন প্রশাসন। এরমধ্যে, গেল ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ওখোটস্ক সাগর, জাপান সাগর এবং আর্কটিক মহাসাগরের উপর দিয়ে একযোগে কৌশলগত বোমারু বিমানের বিশেষ মহড়া অন্যতম।
পারমাণবিক প্রতিরোধের অংশ হিসেবে ওই মহড়ায় রাশিয়ার টিইউ-নাইন্টি ফাইভ বোমারু বিমান অংশ নেয়। একইধরনের বোমারু বিমান দিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি ব্যারেন্টস সাগর এবং নরওয়েজিয়ান সাগরের ওপর দিয়েও মহড়া চালায় মস্কো।
কৌশলগত বোমারু বিমানের মহড়া নিয়ে উত্তেজনার রেশ না কাটতেই ৬ ফেব্রুয়ারি ভোলগা অঞ্চলে ইয়ারস আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের গোপন অনুশীলন শুরু করেছে পুতিন বাহিনী। ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্র সংঘাতের সময়ে গেল বছর পশ্চিমাদের জন্য পারমাণবিক সতর্কতা হিসেবে একই ধরনের মহড়া চালিয়েছিল রাশিয়া। তবে এবার ইয়ারস ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে নাশকতাকারী গোষ্ঠী এবং শত্রুর গোপন নজরদারির আস্তানার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক অনুশীলন চালাচ্ছে বলে দাবি রুশ সেনাদের।
এমন উত্তেজনার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে সামনে আসলো ক্ষেপণাস্ত্র শিল্পে উত্তর কোরিয়ার অগ্রগতির খবর। তাও আবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই জ্যেষ্ঠ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তার মুখ থেকে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাদের দাবি, গেল ডিসেম্বর থেকে উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে যতগুলো আঘাত হেনেছে প্রত্যেকটির লক্ষ্যবস্তু ছিল নির্ভুল। অর্থাৎ ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পাওয়া জ্ঞান উত্তর কোরিয়াকে তার ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি আরও বিকাশে সহায়তা করছে বলেও মনে করেন তারা। তবে এ বিষয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ইউক্রেনে অভিযানকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়ার সাথে হাত মিলিয়ে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার উন্নতি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি ও উদ্বেগজনক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন সিউলের অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ইয়াং উক। এ অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামার চেয়ে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হওয়ার শঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের এই সংঘাত আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে আশঙ্কা অনেকের।