দুই সহস্রাধিক প্রাণের বিনিময়ে নতুন করে স্বপ্ন বুনছে লাল সবুজের বাংলাদেশ। ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও স্বৈরশাসকের কবল থেকে মুক্তির মিছিলে যারা পা মিলিয়েছিল সে বিপ্লবীরা আবারো রাজপথে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে।
৫ আগস্ট হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে মূর্ত হয়ে ওঠা যে আকাঙ্ক্ষার জানান ছাত্র-জনতা সেদিন দিতে পারেনি তা ঘোষণার জন্য ৩১ ডিসেম্বরকে বেছে নিলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, অভ্যুত্থানের সকল পক্ষকে সাথে নিয়ে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দেবে অন্তর্বর্তী সরকার।
৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘সর্বসম্মতিক্রমে এ ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হবে এবং জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।’
এরপরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মার্চ ফর ইউনিটি থেকে আল্টিমেটাম আসে পনের দিনের মধ্যে দিতে হবে ঘোষণাপত্র।
কিন্তু সপ্তাহ পার হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে দাবি করছে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি।
দলটির শীর্ষ পর্যায়ের এই নীতিনির্ধারক বলছেন, জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র নিয়ে যেমন অস্পষ্টতা আছে তেমনি যে দুএকটি বিষয় প্রকাশ্যে এসেছে তা নিয়েও রয়েছে দ্বিমত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সংবিধান রাখা না রাখা বা তার সংশোধনীর বিষয়ে তারা কার্যকর ভূমিকা নেবে। এটি ছাত্রদের মাধ্যমে কার্যকর হবে এমন কোনো বিষয় নয়। যোগাযোগ বলতে যেমনটা বোঝায় মতামত চাওয়া বা গুরুত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসা এমন কিছু ঘটে নি।’
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলও জানালেন, এখনো তাদের সাথে সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি। এ নিয়ে তার দলের অবস্থান জানতে চাইলে বিষয়বস্তু না জেনে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘অফিশিয়ালি সরকার বা ছাত্রদের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে মত বিনিময় এটা নিয়ে আলাপ আলোচনা বা ডিসকাশন এটা কিন্তু হয় নি। আসলে সেখানে কি থাকছে কি থাকছে না কি পরিবর্তন হচ্ছে কি ঢুকছে এগুলো না জেনে জামায়াতে ইসলামীর মতো দায়িত্বশীল সংগঠন আগাম কোনো মন্তব্য করাটা আমি সমীচীন মনে করি না।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হয়নি বলেই এই ঘোষণাপত্রের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সকল পক্ষকে সুচিন্তিতভাবে এগুনোর পরামর্শ তাদের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় যে ঘোষণা হয়েছিল সেটা অনুযায়ী দেশটা চলেনি। সেজন্য আমাদের নতুন করে অভ্যুত্থান করতে হলো এবং ঘোষণা দিতে হলো। এজন্য এটা জরুরি। তাদের জাস্টিফিকেশন লাগবে না একটা।’
আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘ছাত্র নেতারা যখন রক্ত দিয়েছেন তখন তারা নিশ্চয়ই খুবই দায়িত্বশীল হবে। আবার রাজনৈতিক নেতারা যতই ক্ষমতার কাছাকাছি অবস্থান করতে চায় তারাও একটা যৌক্তিক অবস্থানে পৌঁছাবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার যত দ্রুত রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে ঘোষণাপত্র জাতির সামনে আনতে পারবে.ততই জাতীয় ঐক্যের পথ মসৃণ হবে, বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।