মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ইয়েমেনি হুথি বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে সফল হামলার দাবি ইসরাইলের

ইয়েমেনি হুথি বিদ্রোহীদের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে সফল হামলার দাবি করেছে ইসরাইল। এছাড়া, দেশটির হুদেইদা বন্দরে ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৭ জন ও তেল শোধনাগারে হামলায় ২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এর আগে, ইসরাইলের মধ্যাঞ্চল লক্ষ্য করে ইয়েমেন থেকে ছোঁড়া একটি প্রোজেক্টাইল মিসাইল প্রতিহত করে তেল আবিব। এদিকে, হুথিদের উত্থান ও আসফালনের দায় ইরানকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাত। স্থানীয় সময় রাত পৌনে তিনটায় সাইরেনের শব্দে কেঁপে ওঠে মধ্য ইসরাইল। তেল আবিবের আকাশে তখন ইয়েমেন থেকে ছোঁড়া প্রোজেক্টাইল মিসাইলের ঝলকানি।

যদিও ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমের কল্যাণে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়নি তেলআবিব। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র নিশ্চিত করেন ইয়েমেন থেকে ছোঁড়া প্রোজেক্টাইলটি সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে। যদিও এ হামলা করে পার পায়নি ইয়েমেনি হুথি বিদ্রোহীরা।

পাল্টা হামলা চালাতে খুব বেশি সময় নেয়নি তেল আবিব। প্রথমে ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠীটির সামরিক ঘাঁটিতে সফল হামলার দাবি করেন ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র। পরে আল জাজিরার তথ্য থেকে জানা গেছে, সামরিক ঘাঁটি ছাড়াও হামলা হয়েছে ইয়েমেনের গুরুত্বপূর্ণ দু'টি বন্দর, তেল শোধনাগার ও রাজধানী সানার জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র লক্ষ্য করে।

ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, ‘ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনী ইয়েমেনের বিদ্রোহীগোষ্ঠী হুথির সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে সফল হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে। নৌবন্দরসহ রাজধানী সানার জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। মনে রাখবেন, এই সব স্থাপনা ব্যবহার করে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করে আসছিল বিদ্রোহীরা। হুথিদের হামলার কবল থেকে দেশ ও দেশের নাগরিকদের রক্ষায় যে কোনো পদক্ষেপ নিতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে না ইসরাইল।’

সম্প্রতি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুটা চড়াও হতে দেখা গেছে হুথি বিদ্রোহীদের। ইয়েমেনের উপকূল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ও গালফ অব এডেনে মার্কিন নৌযান লক্ষ্য করে হামলা চালায় তারা। সবশেষ মধ্য ইসরাইলে প্রোজেক্টাইল ছুঁড়ে আবারও আলোচনায় ইয়েমন-ফিলিস্তিন-লেবাননের সাথে ইসরাইলের ত্রিপক্ষীয় সংঘাত।

এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর, ইরান সমর্থিত দেশ বা ইরানের মদদে বেড়ে ওঠা সশস্ত্র সংগঠনগুলো চড়াও হয় নেতানিয়াহু বাহিনীর বিরুদ্ধে। হামাসের পর ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় হুথি ও হিজবুল্লাহ'র মতো ইরানের প্রক্সি সংগঠনের সাথে। যদিও এসব সশস্ত্র সংগঠনের ১২ থেকে ১৩ জন হেভিওয়েট নেতাকে হত্যা করে তেহেরানকে কোণঠাসা করে ফেলে তেল আবিব। আঞ্চলিক সংঘাতে না জড়িয়ে এবার দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মনোযোগ দিতে ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। আর ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে ব্লিংকেন বলেন, গাজার যুদ্ধের অবসান হলেও হুথিদের ফিরে আসার সুযোগ নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ‘হুথি বিদ্রোহীদের উত্থান, সক্ষমতা বৃদ্ধির পুরো দায়ভার ইরানের। তারা সুযোগ করে দেয়ার কারণেই বিদ্রোহীরা সামরিক সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং এমন অনেক হামলা চালিয়েছে যা তাদের সাধ্যের বাইরে ছিল। এতদিন ধরে তারা যে সক্ষমতা অর্জন করেছে, গাজায় তার প্রতিফলন দেখাচ্ছে। আমি মনে করি, গাজা যুদ্ধের অবসান হলেও হুথি বিদ্রোহীরা যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে, সেখান থেকে রাতারাতি তারা সরে আসতে পারবেনা।’

ইসরাইল প্রসঙ্গে ব্লিংকেন বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে নেতানিয়াহু বাহিনী যে সাফল্য অর্জন করেছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে, এই সাফল্য ধরে রেখে তেল আবিব কোন উপায়ে গাজা যুদ্ধের সমাপ্তি টানবে তা নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে। ৭ অক্টোবরের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে নেতানিয়াহু কোন সমাধানের পথে হাঁটছেন- মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মত এ প্রশ্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেরও।

এএম