বিদ্রোহীদের অবিস্মরণীয় উত্থানের মুখে সিরিয়ায় ৫৩ বছরের আসাদ সাম্রাজ্যের পতন ঘটলো মাত্র ১২ দিনে। দামেস্ক থেকে পালিয়ে মস্কোয় আশ্রয় নিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। তবে কুখ্যাত এই স্বৈরশাসক দেশকে রেখে গেছেন বিধ্বস্ত অর্থনীতির মাঝে।
মাত্র ১ যুগ আগে সাড়ে ৬৭ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ছিল সিরিয়ার। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধে তছনছ হয়ে যায় সবকিছু। ১৪ বছর পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির অর্থনীতির আকার ৮৫ শতাংশ কমে দাড়িয়েছে মাত্র ৯ বিলিয়ন ডলারে। এতে দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রা সিরিয়ান পাউন্ডের দরপতন হয়েছে ২৭০ গুণ। মূল্যস্ফীতি পৌঁছেছে ১২২ শতাংশে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, দেশটির প্রতি চারজনের একজন লড়াই করছেন চরম দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পের পর এই সংকট আরো বেড়েছে। অর্থনৈতিক সংকটের আরেকটি কারণ জনসংখ্যা কমে যাওয়া। গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ লাখের বেশি সিরিয়ান। দেশ ছেড়েছেন ৫০ লাখের বেশি জনগণ। অন্যদিকে আরো ৭০ লাখের বেশি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত।
সিরিয়ার অর্থনীতির দুটি মূল চালিকাশক্তি জ্বালানি তেল ও কৃষিখাত। দেশটির ৪০ শতাংশ জ্বালানি তেল ক্ষেত্র যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এসডিএফ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে বীজ, সার, তেল ও যন্ত্রাংশ সংকটে কৃষিপণ্য রপ্তানি কমেছে ৮৯ শতাংশ। তাই বিশ্লেষকরা বলছেন, ভবিষ্যৎ সিরিয়ার অর্থনীতি আলোর মুখ দেখবে কিনা, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে বিদ্রোহীদের জাতীয় সরকার গঠনে ঐকমত্যের ওপর।
মর্নিং বিজনেস, ফ্রান্স ২৪ এর সম্পাদক চার্লস পেলিগ্রিন বলেন, ‘রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এগুলো দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। যা নিয়ন্ত্রণ করছে কুর্দি যোদ্ধারা। সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে ক্ষমতায় যারা আসবে তাদের সদিচ্ছা আছে কী না, তার ওপর।’
সিরিয়ার বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে প্রয়োজন হবে অন্তত ১০ বছর। আর দেশকে সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠনে পেরিয়ে যেতে পারে ২০৪৪ সাল। যদিও স্থিতিশীল দেশ তৈরিতে বিদ্রোহীদের সহাবস্থানের পাশাপাশি প্রয়োজন বিশ্ব সম্প্রদায় ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সমর্থন।