অর্থনীতি , পরিষেবা
দেশে এখন
0

জ্বালানি খাত সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে ক্যাবের ১১ দাবি

দেশের জ্বালানি খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় পরিহার করে ভোক্তাবান্ধব করে তোলার পাশাপাশি সংস্কারের লক্ষ্যে ১১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। আজ (রোববার, ১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।

‘জ্বালানি খাত সংস্কার চাই: ক্যাব’ শীর্ষক এ সংবাদ সম্মেলনের মূল প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম। এতে মূল আলোচক ছিলেন, ক্যাবের আইন উপদেষ্টা ও আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

দেশের জ্বালানি খাতের নিরাপত্তায় ক্যাবের ১১ দফা দাবিসমূহ হলো অন্যায় ও অযৌক্তিক ব্যয় রোধ করে ঘাটতি সমন্বয় ও পণ্য মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধ এবং সংকট মোকাবেলা করার লক্ষ্যে ৩ বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির মূল্যহার বৃদ্ধি না করার বিষয়ে সরকারি ঘোষণা; সেই লক্ষ্যে বিইআরসির আওতায় ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি ২০২৪-এর আলোকে জ্বালানি খাত সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়নের জন্য একটি ‘জ্বালানি খাত সংস্কার কমিশন’ গঠন এবং সংস্কার প্রস্তাবে বিদ্যুৎ, প্রাথমিক জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহে লুণ্ঠনমূলক ব্যয় রোধ করে ঘাটতি সমন্বয় এবং ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা; বিইআরসির চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ, দক্ষ, সৎ পেশাজীবীদের নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনায় সার্চ কমিটি গঠন।

এছাড়াও জ্বালানি অধিকার সুরক্ষায় জ্বালানি খাতের আওতাধীন বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা বোর্ড/সংস্থাসমূহে বিভিন্ন পদে পদস্থ ক্যাডার কর্মকর্তাদের অপসারণ; একই সাথে পেট্রোবাংলা, বিপিসি, পিডিবি, আরইবি, স্রেডা, এবং বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি খাতের বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ পদসমূহের কর্মকর্তাদের পরিবর্তন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সম্পদ উভয় বিভাগেও অনুরূপ পরিবর্তন নিশ্চিত করা; বিইআরসির দ্বারা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে অংশীজনদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ; বিইআরসিকে সক্ষম ও কার্যকর করার জন্য মন্ত্রণালয়কে শুধু আপস্ট্রিম তথা পলিসি রেগুলেটরের দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে সেখানে পরিবর্তন আনা; বিইআরসি আইনের সংশোধনী ৩৪ক বাতিল হয়েছে, এর সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ বাতিল করা এবং প্রতিযোগিতাবিহীন বিনিয়োগ ও ক্রয়-বিক্রয় আইন আরোপ; ২০১২ সালে বিইআরসি প্রস্তাবিত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের (পেট্রোল, ডিজেল, ফার্ণেসওয়েল, কেরোসিন ইত্যাদি) মূল্যহার নির্ধারণ সংক্রান্ত তিনটি প্রবিধানমালা কার্যকর করা; কষ্ট প্লাস নয় কষ্ট বেসিসে লুন্ঠনমুক্ত মুনাফাবিহীন সরকারি জ্বালানি সেবা নিশ্চিত করা এবং সবশেষ বিদ্যুৎ, প্রাথমিক জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহের যেকোনো পর্যায়ের দুর্নীতি ও লুণ্ঠনে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ এবং জ্বালানি অপরাধী হিসাবে তাদের বিচার করা।

এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘জ্বালানি খাতের লুন্ঠনমূলক ব্যয় পরিহার করতে না পারলে ভোক্তা তার জ্বালানি অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। বিগত সরকার জ্বালানি খাতে যে অলিগার (লুণ্ঠন) করে গেছে, বর্তমানে যারা এখনো জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছে, তারাও সেই অলিগার গ্রুপেরই লোক। তাই জ্বালানি খাতের উন্নয়নে সেই অলিগলারদের দ্রুত সড়িয়ে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত ৩ বছরের মধ্যে দেশে বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি। আর এ জন্যে (জ্বালানি খাতের উন্নয়নের জন্য) বর্তমান সরকারকে (অন্তর্বর্তী সরকার) ২/৩ বছর থাকতে হবে। তাই আমরাও ভোক্তার অধিকার রক্ষায় সরকারের সাথে কাজ করতে চাই। আর জ্বালানি খাত থেকে লুন্ঠনমূলক ব্যয় পরিহার করতে চাইলে সামিট-আদানির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে চুক্তি বাতিল করতে হবে।’

ক্যাবের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘একটি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার অন্যতম শর্ত হলো ভোক্তাকে সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ জ্বালানি নিশ্চিত করা। কিন্তু এটা নিশ্চিত না হলে কি হয়- সেটা বিগত সরকারের শাসনামলে দেশের জ্বালানি খাতের অস্থিরতাই প্রমাণিত। তেল-গ্যাসসহ জ্বালানি খাতের ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের আমানতকে লুণ্ঠন করে মুনাফা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী দেশের সকল জ্বালানির মূল্য বিইআরসি নির্ধারণ করবে। কিন্তু আমরা দেখছি, পেট্রোলিয়ামের মূল্য নির্বাহী আদেশে নির্ধারণ করা হচ্ছে। এখানে দাম কমানো হোক বা বাড়ানো হোক, দুটোই আইন বিরোধী। আমরা চাই- সকল জ্বালানির মূল্য বিইআরসি আইন অনুযায়ী (গণশুনানির মাধ্যমে) নির্ধারণ করবে এবং ভোক্তা প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে ক্যাব অংশ নেবে।’

এ সময় সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বক্তব্য উল্লেখ করে এই আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ভর্তুকি না দেয়ার বিষয়ে বিগত সরকারের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সব সময়ই সেই সকল দেশের উদাহরণ দিয়ে বিভ্রান্তি করেছে, যে দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের থেকে অনেক উন্নত। কিন্তু বাংলাদেশের মতো অনুন্নত অধিকাংশ দেশেই জ্বালানিসহ অনেক খাতেই ভর্তুকি দেয়া হয়। তাই বাংলাদেশেও শিক্ষা-জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ভর্তুকি দেয়া প্রয়োজন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মিজানুর রহমানসহ অনেকে।

tech

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর