‘আমি রক্ত দিয়া দেশ স্বাধীন করব, আমার লাইগা টেনশন কইরো না মা।’ এ কথা বলে বিলাপ করছিলেন জুলাই আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের শহীদ আব্দুর রাকিবের মা অজিফা খাতুন। কুমিল্লার মুরাদনগরের বাসিন্দা আব্দুর রাকিব ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় তার মা।
একই অবস্থা চট্টগ্রামের পিটিআই অডিটোরিয়ামে জুলাই আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে বিভাগের ১১ জেলার শহীদ ১০৪ পরিবারের। এসময় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ও সাধারণ সম্পাদককে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।
একজন শহীদের ভাই বলেন, ‘আমার ভাই কিন্তু আমার সাথেই ছিল। কিন্তু এতো মানুষের ভিড়ে তখন চিন্তা করছি এতো মানুষ মরতেছে, আমার ভাই মরলে সমস্যা নেই। আমার ভাইয়ের মরদেহ আমি নিজেই আমার হাতে করে নিয়ে আসছি।’
এসময় তাদের সান্ত্বনা দেয়ার পাশাপাশি সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন সারজিস আলম। জানান, শেখ হাসিনা প্যাথলজিক্যাল খুনি, এই খুনি নতুন করে গল্প সাজাচ্ছে, নতুন রূপে ফিরে আসতে চাচ্ছে।
সারজিস আলম বলেন, ‘যেই খুনি তার পরিবারের ১৮ জনের হত্যা নিয়ে গত ১৬ বছর ধরে মায়াকান্না করলো, সে যদি এটা মায়াকান্না না করে, সে যদি প্যাথলজিক্যাল খুনি না হয় সে তো দুই হাজার খুন করতে পারতো না। কোনো একটা জীবনের প্রতি যদি তার এই মায়া থাকে তাহলে তো আরেকটা জীবন সে ঝড়াতে পারতো না। আমরা এখনই দেখি যে আমরা সেই খুনিদের কথা ভুলে যাচ্ছি। সেই খুনিরাই গল্প সাজাচ্ছে। খুনিরা নতুন করে নতুন রূপে ফিরে আসছে।’
শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়ে এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান। পাশাপাশি প্রশাসনকে আরও বেশি কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তারা।
একজন সমন্বয়ক বলেন, ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে সংস্কার করার জন্য আপনার এখনও কোনো প্রতিবন্ধকতা থেকে থাকে তাহলে বাংলাদেশের মানুষকে আপনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সর্বদায় আপনাদের পাশে আছে। সংস্কারের পক্ষে রয়েছে।’
অন্য একজন সমন্বয়ক বলেন, ‘আমার ভাইদের যে আকুতি, দেশ গড়ার জন্য যে আকুতি, ফ্যাসিস্টমুক্ত দেশ গড়ার যে বিপ্লব, যে সংহতি তারা দেখিয়েছেন, যে দায়িত্ব তারা আমাদের দির্য়ে গিয়েছেন আমরা এখনও বেঁচে আছি।’
প্রথম ধাপে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১১ জেলার ১০৫ জন শহীদ পরিবারের মাঝে পাঁচ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয় জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন। পর্যায়ক্রমে বাকিদেরও চেক পৌঁছে দেয়ার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা।