কারাবন্দি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মুক্ত না করা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না পিটিআই এর হাজার হাজার সমর্থক। গেল ৯ নভেম্বর খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে আয়োজিত গণসমাবেশে ইমরানের মুক্তির দাবি উঠে। তাদের অভিযোগ নির্বাচনে কারচুপি করে পিটিআইকে ক্ষমতার বাইরে রেখেছে শেহবাজ শরীফের সরকার। দেশটির সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন পিটিআই সমর্থকেরা।
গেল দু'দিন ধরে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজপথে। জীবনের বিনিময়ে ইমরান খানকে মুক্ত করার ঘোষণা দেন দলের চেয়ারম্যান গওহর আলী খান।
তিনি বলেন, 'পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী ইমরান খানের মুক্তিতে কোনো বাধা নেই। তার মুক্তি সম্ভব কিছু নয়। তাকে মুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কোনও বিদেশি দেশের সাহায্যও আশা করে না পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ।'
এদিকে ইমরানের স্ত্রী বুশরা বিবির নেতৃত্বে পিটিআই সমর্থকদের বিক্ষোভ মিছিলটি পুলিশি বাধা পেরিয়ে ইসলামাবাদের কাছে পৌঁছেছে। বেলুচিস্তান থেকে নারী ও শিশুসহ বিক্ষোভকারীদের বিশাল মিছিলটি রাজধানীর কাছে চলে এসেছে। এছাড়া খাইবার পাখতুনখোয়া মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গন্ডাপুরের নেতৃত্বে রাজধানীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।
বিক্ষোভকারীদের দমাতে গোটা ইসলামাবাদকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে। শিপিং কন্টেইনারের সাহায্যে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে করে দেয়া হয়েছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও প্রবেশপথ। এছাড়া বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট সেবা।
রাজধানী থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অ্যাটকো শহরে পিটিআই সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে এবং মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ও লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।
একজন আন্দোলনকারী বলেন, 'আমাদের ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা পিছু হটবো না। ইমরান খানকে মুক্ত করা এবং আমাদের শর্ত না মানা পর্যন্ত আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাব।'
অন্য একজন আন্দোলনকারী বলেন, 'দেশের সবকিছু বন্ধ রাখার চেষ্টা করেও আমাদের দমাতে পারবে না। ইমরান খানের নেতৃত্বে আমরা পাকিস্তানের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনবো।'
যদিও পিটিআই সমর্থকদের আন্দোলনকে বেআইনি বলে রায় দিয়েছে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। ১৪৪ ধারা জারিসহ চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি। নিষিদ্ধ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোনো কিছুতেই যেনো থামানো যাচ্ছে না আন্দোলনকারীদের। এরইমধ্যে পিটিআই এর শীর্ষ নেতারা রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
নির্বাচনী গণনায় চুরি, বেআইনি গ্রেপ্তার ও সংবিধানের ২৬তম সংশোধনীর প্রতিবাদে গেল ১৩ নভেম্বর এই বিক্ষোভের ডাক দেন কারাবন্দি ইমরান খান। দাবি আদায়ে ২৪ নভেম্বর ইসলামাবাদে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। যা এখনও চলমান।