ইউরোপ
বিদেশে এখন
0

ইউক্রেনে ইরানের পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার সমরাস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া

ইউক্রেনে সেনা অভিযানে ইরানের পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার সমরাস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলছে, চলতি বছর দেশটিতে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই উত্তর কোরিয়ার তৈরি, কিন্তু যন্ত্রাংশ যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা। সংবাদমাধ্যম সিএনএনের বিশ্লেষণ বলছে, এই যন্ত্রাংশগুলো কোন মাধ্যম হয়ে উত্তর কোরিয়াতে পৌঁছেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তবে তারা বলছেন, এই যন্ত্রাংশ পশ্চিমা দেশ থেকে চীন হয়ে উত্তর কোরিয়াতে গেছে, এই সরবরাহ ব্যবস্থায় জড়িত ছিল মার্কিন অনেক কোম্পানি।

ইরানের তৈরি সমরাস্ত্র তো ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বহু আগে থেকেই ব্যবহার করে আসছে রাশিয়া। এবার উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে কিয়েভে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে মস্কো। বছরজুড়ে যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দিয়ে ইউক্রেনে হামলা হয়েছে, সেগুলোর বেশিরভাগই উত্তর কোরিয়ার।

ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলছে, চলতি বছরই দেশটিতে ৬০ টি উত্তর কোরিয়ার কে এন টোয়েন্টি থ্রি মিসাইল ছোড়ে রুশ সেনাবাহিনী। সব মিলিয়ে ইউক্রেনে ছোড়া হয় মোট ১৯৪ টি ব্যালিস্টিক মিসাইল। আগস্ট আর সেপ্টেম্বরে আরও বেড়ে যায় ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা।

ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়েছে রুশ সেনাবাহিনী। কুরস্কে মোতায়েন করা ১১ হাজার সেনার পাশাপাশি অত্যাধুনিক এই মিসাইলগুলো পিয়ংইয়ংয়ের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে মস্কোকে। সংবাদমাধ্যম সিএনএনের বিশ্লেষণ দিচ্ছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। বলা হয়েছে, মিসাইলের ধ্বংসাবশেষ থেকে দেখা গেছে, এগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি বর্তনী রয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ তৈরি হয়েছে পশ্চিমা ৯টি প্রতিষ্ঠানের কাছে, এরমধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস। ইউক্রেনের অ্যান্টি করাপশন কমিশন বলছে, কিছু যন্ত্রাংশতো ২০২৩ সালেও তৈরি হয়েছে। সমরাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ নিয়ে গবেষণার জন্য রাখা ওয়্যারহাউজে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ড্রোন আর জ্বলে যাওয়া ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে সেগুলো পরিপূর্ণ। রয়েছে শাহেদ, ইস্কান্দার আর কেএন টুথ্রি মিসাইল।

কিয়েভের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামরিক গবেষণা কেন্দ্র বলছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোনগুলোতে উত্তর কোরিয়ার তৈরি কিছুই নেই, সব বিদেশি যন্ত্রাংশ। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দারা বলছেন, এগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ যন্ত্রাংশই যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি আর সুইজারল্যান্ডের। চলতি বছর এ ধরনের আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন কনফ্লিক্ট আরমামেন্ট রিসার্চ, যেখানে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার বেশিরভাগ মিসাইলেই ৭৫ শতাংশ যন্ত্রাংশ যুক্তরাষ্ট্রের।

এই যন্ত্রাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কীভাবে উত্তর কোরিয়াতে গেল, তা নিয়ে নেই সঠিক কোন উত্তর। তবে সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যস্বত্বভোগী আর উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই যন্ত্রাংশ কেনে চীন। এরপর সেগুলো সরবরাহ করা হয় উত্তর কোরিয়াতে। যন্ত্রাংশের মধ্যে কিছু নকল আর চীনের তৈরিও হতে পারে। কনফ্লিক্ট আরমামেন্ট রিসার্চ - কার বলছে, উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রে এখন পর্যন্ত আড়াইশ কোম্পানির যন্ত্রাংশ পাওয়া গেছে। বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডা ভিত্তিক পাঁচ পরিবেশকের কাছে বিক্রি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অধিদপ্তর এরমধ্যেই কোম্পানিগুলোকে শনাক্তের চেষ্টা করছে। ইউক্রেনের গোয়েন্দা বাহিনী বলছে, উত্তর কোরিয়ায় যন্ত্রাংশ আসছে ইরান আর রাশিয়া থেকেও। মারণাস্ত্র তৈরিতে রাশিয়া ব্যবহার করছে পশ্চিমাদের যন্ত্রাংশই। কিন্তু খুঁজে বের করা যায়নি, সাপ্লাই চেইনের শুরুটা হচ্ছে কোথা থেকে।

এএম