ঘাড় ব্যথা আধুনিক যুগে একটা বড় সমস্যা। আমাদের প্রতিটি লোকই কেউ না কেউ, একেবারে বাচ্চা যে বাচ্চা কিছুটা কথা বোঝে বা বলতে পারে সেও একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। আবার একেবারে গ্রামের প্রত্যন্ত কৃষক ও একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। এই যে আমাদের ডিভাইসের ব্যবহার স্পেশালি মোবাইল ফোনের ব্যবহার থেকে ঘাড় ব্যথার পরিমাণ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আমাদের ঠিক মাথার নিচের অংশ ঘাড় আসলে অনেকের ধারণা ঘাড় সোজা, ইংরেজি আই (I) অক্ষরের মতো। তা না ঘাড়টা কিছুটা বাঁকা। এই যে সি (C) কার্ভটা মূলত ঘাড় ব্যথার রোগীদের সেটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ঘাড়ের মাসেল পুল হতে পারে, মাংস টেনে ধরতে পারে। এটা হচ্ছে ঘাড় ব্যথার মূল কারণ।
যদি ঘাড়ে আঘাত পায়, খেলাধুলা করতে গিয়ে ঘাড়ে যদি আঘাত পায়, তা থেকে ঘাড় ব্যথা হতে পারে। তারপর কেউ যদি উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন বা ঘাড়ে ক্যান্সারের মতো রোগ থাকে বা টিবি বা বিভিন্ন আর্থাইটিস যেটা আমরা বাতরোগ বলে থাকি। যেমন স্পন্ডাইলু আর্থপেটি বা স্পন্ডাইলু অ্যানকালোজিং স্পন্ডেলাইটিস অন্যান্য আর্থাইটিস রোগ, বয়সজনিত হাড়ক্ষয়, বিভিন্ন ইঞ্জুরি হচ্ছে ঘাড় ব্যথার অন্যতম কারণ।
শোয়ার বালিশ যদি উঁচু বালিশ হয় বা একটা মানুষের যে পরিমাণ ওজন কেরি করার কথা তার চেয়ে যদি বেশি ওজন ক্যারি করে তখন ঘাড় ইঞ্জুরি থেকে ঘাড় ব্যথা হতে পারে। ঘাড়ের অ্যানাটোমিকাল স্ট্রাকচার যদি চেইঞ্জ হয়ে যায়, হাড় যদি সরে যায় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে যদি অস্টিওপরোসিস বা হাড়ক্ষয় হতে থাকে তখন ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। মাথার বিভিন্ন সমস্যা থেকে ঘাড় ব্যথা হতে পারে, চোখের সমস্যা থেকে ঘাড় ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় ঘাড় ব্যথা ঘাড় থেকে হাতে চলে যেতে পারে, যেটা আমরা বলি ঘাড়ের ডিস্প্রলাস বা অনেক সময় ডাক্তাররা ঘাড়ের স্লিপডিস্ক বা বাংলাদেশে বলা হয় রগ চাপ খেয়েছে।
অনেক ঘাড়ে ব্যথা না হয়ে হাতে হতে পারে, হাত অবশ লাগতে পারে, জিজি করা একেবারে কমন সমস্যা।
ঘাড় ব্যথার চিকিৎসাক্ষেত্রে যে কারণগুলো ইতিপূর্বে বলা হয়েছে, এই কারণ গুলো যদি আমরা অ্যাভয়েড করতে পারি, মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সময় সোজা হয়ে বসে মোবাইলটা হাতের উপরে নিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। পেশাগত কাজে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করাই ভালো। শুধু মোবাইল রিসিভ এর ক্ষেত্রে হতে পারে। ল্যাপটপের ব্যবহার কমাতে হবে বা
পেশাগত কাজে ল্যাপটপ ব্যবহার না করে ডেস্কটপ ব্যবহার করতে হবে। পাতলা নরম বালিশে শুইতে হবে। কোনো ভারোত্তোলনের ক্ষেত্রে সাবধানে আমাদের কাজগুলো করতে হবে। আমরা যখন বসে বসে কাজ করি মাঝে মাঝে ঘাড়ের বিভিন্ন ব্যায়াম আমরা দিয়ে থাকি ও ব্যায়ামগুলো আপনারা করতে পারেন। অনেকাংশেই ঘাড়ের সমস্যাগুলো থেকে আমরা প্রিভেনশন করতে পারি। হাঁটা চলাফেরা থেকে প্রিভেনশন করতে পারি।
তবে কারও যদি ঘাড় ব্যথা হয়ে যায়, তাহলে ঘাড়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখিয়ে প্রয়োজনে ব্লাড টেস্ট, এক্সরে, এমআরই করে ডায়াগনোসিস করতে হবে। সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ রোগী আমরা অ্যাডভান্স রিহ্যাব ফিজিও চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশন প্রয়োজন হতে পারে। তবে বেশিরভাগ রোগীর অপারেশন বিহীন এক্সারসাইজ বা রিহ্যাব ফিজিও বা হসপিটালে থেকে বা এসে গিয়ে চিকিৎসা বা অ্যাডভান্স রিহাব চিকিৎসা নিলে এবং টানা কাজ বাদ দিতে হবে। ধরেন আপনি একটা কাজ করছে নি করছেন সেটা বাদ দিয়ে আধা ঘণ্টা ঘণ্টা পর পর আপনাকে একটু উঠে যাওয়া একটু হাঁটা মানে আপনাকে রিলাক্স হতে হবে। মাসেলগুলোর রিলাক্সেশন, পেশিগুলোকে রিলাক্স করার ব্যবস্থা করতে হবে এবং যেদিন বন্ধের দিন থাকে সেদিন পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। আপনার অ্যারোবিক এক্সারসাইজ যেমন হাঁটা, সাইক্লিং সাঁতার কাটা জাতীয় ব্যায়ামগুলো ঘাড় ব্যথার মত যেকোনো মারাত্মক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারবে।