মার্কিন মুলুকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠেছে। চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউজের চাবি বুঝে পাওয়ার সময়ও ঘনিয়ে আসছে ট্রাম্পের।
এ অবস্থায় ট্রাম্পের আগের শাসনামলের সময় ওয়াশিংটন-বেইজিং-এর ব্যবসায়িক বিরোধের কথা মাথা আসতেই দুশ্চিন্তার পাল্লা ভারি হচ্ছে চীনের। এবারের নির্বাচনী প্রচারণায়ও যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য আমদানিতে ট্রাম্পের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপের ঘোষণায় আরও বেশি উৎকণ্ঠায় শি জিনপিং প্রশাসন। কারণ সত্যিই যদি যুক্তরাষ্ট্র এমন পদক্ষেপ নেয়, তবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের প্রবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যাদের নিয়ে তার নতুন প্রশাসন সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে আগামী চার বছর মার্কিন-চীন সম্পর্ক আরও কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ চীন বিরোধী মনোভাব পোষণ করা ব্যক্তিদের দিয়েই ট্রাম্প তার মন্ত্রিসভা সাজাচ্ছেন বলে আভাস মিলছে। এর মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে যাওয়া মার্কো রুবিও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলেও মনে করছেন অনেকে। এর একটি বড় কারণ, আগে কট্টর সমালোচক হিসেবে চীনের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় পড়েছিলেন এই রিপাবলিকান নেতা।
এসওএএস চায়না ইনস্টিটিউটের পরিচালক স্টিভ সাং বলেন, 'ট্রাম্প প্রশাসনে যারা জায়গা পাচ্ছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখা খুব কঠিন হবে। মার্কো রুবিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলে এটি চীনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। রুবিওর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নিলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে কথা বলারও সুযোগ পাবে না চীন। যা দু'দেশের জন্যই অগ্রহণযোগ্য। বেইজিং নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও হয়তো রুবিওর সাথে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এর এর কথোপকথন সহজ হবে না।'
এত দুশ্চিন্তার মধ্য চীনের জন্য কিছুটা আশার আলো জাগিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনে টেসলার কর্ণধার ইলন মাস্কের অন্তর্ভুক্তি। কারণ চীনের শাংহাইয়ে একটি পরীক্ষামূলক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে নতুন মেগা কারখানা নির্মাণে চীনের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে টেসলার। তাই যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে মার্কিন ধনকুবেরের বেইজিংয়ে ঘনিষ্ঠতা জাদুকরী ভূমিকা পালন করতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্টিভ সাং বলেন, 'চীনের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিকে মধ্যপন্থি করতে ইলন মাস্কের বন্ধুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর ব্যবহারে চীনা সরকারের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তারপরেও আমাদেরকে ট্রাম্প প্রশাসনের বাস্তবতা মাথায় রাথতে হবে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নীতিতে সবসময় অটল। ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় ইলন মাস্ক বলতে গেলে একজন আমন্ত্রিত অতিথি, যিনি প্রেসিডেন্টের জন্য ইতিবাচক কিছু করতে চাচ্ছেন।'
ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথমবার ক্ষমতায় ছিলেন, তখন চীনা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপ করেছিল তার প্রশাসন। ২০২১ সালে ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করার পরও চীনের ওপর ওয়াশিংটনের চাপ খুব একটা কমেনি। বাইডেন প্রশাসন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় আরোপ করা সেই পদক্ষেপগুলো অব্যাহত রেখেছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তা আরও বিস্তৃত হয়েছে। কারণ ভূ-রাজনীতি, অর্থনীতি ও তাইওয়ান ইস্যুতে বরাবরই চির প্রতিদ্বন্দ্বী শীর্ষ অর্থনীতির এই দেশ দু'টি।