২০২৩ সালে পৃথিবীতে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়েছে তার ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী বিশ্বের ১৩টি দেশ। যদিও আজারবাইজানের বাকুতে শুরু হওয়া জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে দেখা মেলেনি এই ১৩ দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের। সম্মেলনে অনুপস্থিত ছিলেন চীনের শি জিনপিং, যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন, ভারতের নরেন্দ্র মোদি কিংবা ফ্রান্সের ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোর মতো জি টোয়েন্টি জোটের ক্ষমতাধর নেতারা।
কপ টোয়েন্টি নাইনের দ্বিতীয় দিনে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সংবাদ সম্মেলন। ১৯৯০ সালের তুলনায় ব্রিটেনে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা ২০৩৫ সাল নাগাদ ৮১ শতাংশ কমানোর উচ্চাভিলাষী এক পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন স্টারমার। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্ব নেতাদের নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের তাগিদ দিয়েছেন ব্রিটেনের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। স্টারমার মনে করেন, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করতে হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক জোটের হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে।
কিয়ার স্টারমার বলেন, 'আনন্দের সাথে জানাতে চাই, জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনার পর যুক্তরাজ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা ১৯৯০ সালের তুলনায় অন্তত ৮১ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রিতে বেধে রাখার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের নিজস্ব উন্নতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।'
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে আসবে, সম্মেলনের শুরু থেকেই এটি পরিষ্কার ছিল। কপ টোয়েন্টি নাইনের দ্বিতীয় দিন যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু বিষয়ক প্রতিনিধি বা ক্লাইমেট এনভয় জানান, ট্রাম্প যেহেতু বলেছেন চুক্তি বাতিল করবেন, এর কোনো ব্যতিক্রম হবে না। জলবায়ু সম্মেলন ও পরিবেশবাদীদের প্রতি ট্রাম্পের এই অবহেলার বিপরীতে দেশের অভ্যন্তরে জলবায়ু রক্ষার আন্দোলন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু বিষয়ক প্রতিনিধি জন পোডেসটা বলেন, 'এটা পরিষ্কার যে, যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী সরকার জলবায়ু সংক্রান্ত সব চলমান প্রক্রিয়া বন্ধ করে, উল্টো পথে হাঁটা শুরু করবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আপনাদের হতাশা আমাদের অজানা নয়। আপনাদের অনেকেই আমাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।'
এবারের সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বরাদ্দ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি মনে করেন, মানবসৃষ্ট কারণে পরিবেশে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা যে হারে বাড়ছে তাতে করে প্রথমেই উপলব্ধি করতে হবে হাতে একেবারেই সময় নেই। দ্রুততম সময়ে কার্বন নিঃসরণ ও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের লাগাম টেনে ধরার পরামর্শ জাতিসংঘ মহাসচিবের।
১১ থেকে ২২ নভেম্বর, ১২ দিনের এই জলবায়ু সম্মেলন, পরিবেশ রক্ষায় আদৌ কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখাতে পারবে কী না- এ নিয়ে বিতর্ক আছে। আয়োজক দেশ খোদ আজারবাইজানের রাষ্ট্রপ্রধান মনে করেন, একটি দেশে তেল বা কয়লা খনি থাকা মানে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ। এগুলো উত্তোলন ও ব্যবহার নিয়ে পশ্চিমাদের এতটা ক্ষুব্ধ আচরণ করা উচিত নয় বলেও মনে করেন তিনি। জলবায়ু ইস্যু ছাড়াও কপ উপলক্ষ্যে বিশ্বনেতা ও পরিবেশবাদী সংগঠনের মধ্যে যে মত বিনিময় হয় সেটির গুরুত্বও কম নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।