দেশে এখন
0

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নগর পরিবহন পরিকল্পনা এবার সফল হবে তো!

একটি মাত্র কোম্পানির মাধ্যমে ফের চালু হচ্ছে 'নগর পরিবহন' সেবা। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)) সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এ উদ্যোগ নিয়েছে। এবার বাসের গায়ে নির্দিষ্ট নাম, রুটের নাম, বাস নম্বর থাকবে, ব্যবহার করা যাবে র‌্যাপিড পাস। আর বাস স্টপেজ, যাত্রী ছাউনির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকায় ৩৪টি ও শহরতলি পরিবহন নামে ঢাকার বাইরে আটটি রুটসহ মোট ৪২ রুটে চলবে নগর পরিবহনের বাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোর নজরদারি ছাড়া সফলতা মেলা কঠিন।

নগর পরিবহন, রাজধানীবাসীর যাত্রায় কিছুটা আরামদায়ক। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা আর অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে এ খাতকে বাঁচাতে জাকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে চালু করা হয়েছিল ঢাকা নগর পরিবহন। অথচ ঘাটারচড়ে বাস ডিপোতে পড়ে আছে বাস। সেবা নেই, তবে এর সাক্ষী হিসাবে রাজধানীজুড়ে দেখা মিলবে বাসস্টপেজ আর যাত্রী ছাউনি।

২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত বিআরটিসির ৩০টি ডাবল ডেকার ও ট্রান্স সিলভা পরিবহনের ২০টি বাসসহ অর্ধশত বাস নিয়ে ঢাকা নগর পরিবহন নামে প্রথম বাসসেবা চালু হয়। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কোনো ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায় নগর পরিবহনের বাস। বিআরটিসিসহ অন্য বেসরকারি কোম্পানিগুলোও তাদের সব বাস তুলে নিয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর থেকেই গণপরিবহন নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ নেয়া হয় নগর পরিবহন আবারও ফিরিয়ে আনার। এবার বাসের গায়ে নির্দিষ্ট নাম, রুটের নাম, থাকবে বাস নম্বর। এছাড়াও নির্দিষ্ট স্টপেজে থামতে হবে, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা করতে পারবে না আর থাকতে হবে টিকিটিং ব্যবস্থা। ব্যবহার করা যাবে র‌্যাপিড পাস।

বাস রুট রেশনালাইজেশনের প্রকল্প পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, 'কিছু শর্তাবলি তাদের মানতেই হবে। আমাদের এই শর্তাবলি আগেই তৈরি করা ছিল। আমাদের সাথে যখন তারা রুট পারমিট নিতেন তখন তারা রাজি হতেন যে এটা হুবহু মেনে চলতে হবে। সেখানে বলা ছিল বাস কাউন্টারভিত্তিক চলবে, বাসে ই-টিকিটিং থাকবে। কিন্তু তারা সেগুলো মানতেন না। এগুলো কঠোরভাবে তাদের মেনে চলতে হবে। সুতরাং এখন যারা আসবে তারা কিন্তু জেনেশুনেই আসছে। তারা ভালোমতো ব্যবসা করতে পারবে, তাদের সেই পরিবেশটা তৈরি করে দিতে হবে। আমার মনে হয় আগে যে পরিবেশে সিচুয়েশনটা ছিল সেটা আসলে পজিটিভ ছিল না।'

বিগত সময়ে সফলতা পায়নি বাস রুট রেশনালাইজেশন কর্মসূচির আওতায় পাইলটিং কার্যক্রমটি। দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের সাথে বিভিন্ন সভায় প্রকাশ্যেই বাস মালিক শ্রমিক নেতাদের সম্পর্কের অবনতির চিত্র স্পষ্ট । বাস মালিক শ্রমিক নেতাদের অসহযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে এ দায় মানতে নারাজ বাস মালিকরা।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ আল লতিফ বলেন, 'এখানে অনেক সমস্যা আছে যা বাস মালিক সমিতি বা বাস মালিকদের পক্ষেও সমাধান করা সম্ভব না। পরে এই বাসগুলো কীভাবে ৪২টি রুটে কোম্পানি বেসড চলবে, সেটা আমরা নির্ধারণ করে একটা নতুন সিস্টেমে গাড়িগুলো চালু করবো।'

এদিকে পূর্বের নগর পরিবহন প্রকল্পে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব ছিল বেশি। দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগও ছিল তাদের বিরুদ্ধে। আর তাই ই-সেবা চালু হওয়ার এক বছরের মধ্যেই নড়বড়ে হয়ে যায় প্রকল্পটি। আর তিন বছরের মধ্যে বন্ধই হয়ে যায় নগর পরিবহন। এ বিষয়ে দুই সিটি করপোরেশনকে প্রশ্ন করা হয়। তাদের উত্তর শুনে মহাদেব সাহার সেই বিখ্যাত উক্তির কথাই মনে পরে যায় বারবার 'ভুলে যাও, ভুলে যাওয়ার চেয়ে ভালো কিছুই নেই'।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, 'আগেরবার কী হয়েছিল তার সমালোচনা সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কিছু বলবো না। আমি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। পেছনে অনেক খারাপ দিক থাকতে পারে। খারাপ দিক থেকেও তো আমরা ভালোর দিকে সিদ্ধান্ত নিবো। যাদের প্রকৃতপক্ষেই সেবা প্রদানের জন্য আগ্রহ আছে, আর আমরা চাই যে এটি একটি প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় আসুক।'

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বলেন, 'ডিটিসিএ এখানে মূখ্য ভূমিকা এবং সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করছে। করপোরেশন আসলে ফ্যাসিলেটেড করে এগুলোকে। সেখানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অবকাঠামোগত সংস্কার, কোনো ট্রাফিক সাইন, সিগন্যাল এগুলো যত ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হবে সেটা আমরা আমাদের দিক থেকে এক্সটেন্ড করবো।'

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হকের মতে, এই পদ্ধতিতে বাস পরিচালনা করতে হলে সব সেক্টরের সদিচ্ছা থাকতে হবে। প্রয়োজন সঠিক নজরদারি। নয়তো আগেরবারের মত এবারও আলোর মুখ দেখবে না নগর পরিবহন।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক বলেন, 'বিশৃঙ্খলার বেনিফেসিয়ারি যারা তাদের নিয়েই মেয়ররা চাচ্ছিলেন যে বাসরুট ফ্রেঞ্চাইস করবেন। তারা ভুল পথে ছিলেন। আমি বলবো এটা একটু সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। ব্যারিয়ারটা কিন্তু টেকনিক্যাল না, এটা লং টেকনিক্যাল। টেকনিক্যালি কীভাবে করতে হবে, তা কিন্তু অলরেডি সাকসেসফুল হয়ে আছে। সুতরাং এটা মোক্ষম সময়। আগে পুলিশও সহযোগিতা করতো না, বাস মালিকরা সহযোগিতা করতো না। কিন্তু সেই পরিস্থিতিটা যেহেতু পরিবর্তিত হয়ে আছে, এটা যদি না করে এটার জন্য সমালোচিত হবে এই সরকার।'

ঢাকায় ৩৪টি ও শহরতলি পরিবহন নামে ঢাকার বাইরে আটটি রুটসহ মোট ৪২ রুটে চলবে নগর পরিবহনের বাস।

এসএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর