উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে ট্রাম্পের ওপর মুসলিম ভোটারদের অনাস্থা

ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছেন না মুসলিম ভোটাররা। ইসরাইল-হামাস সংঘাতের অবসান, জিম্মিদের মুক্তি এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্প কতটা ভূমিকা রাখবেন এ নিয়ে প্রত্যাশার পারদ যেমন চড়া, তেমনি স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কাও রয়েছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার অভিবাসী ইস্যুতে কতটা সহানুভূতিশীল আচরণ করবে এ নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছেন মেক্সিকোতে বসবাসকারী ভেনিজুয়েলার শরণার্থীরা।

১৯টি ইলেকটোরাল ভোট থাকায় এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আলোচনার তুঙ্গে ছিল স্যুইং স্টেট পেনসিলভেনিয়া। মিশিগানের পর সর্বোচ্চ দেড় লাখ মুসলিম ভোটারের বসবাস এই অঙ্গরাজ্যটিতে।

এবারের নির্বাচনে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে ট্রাম্প-কামালার অবস্থান নিয়ে মুসলিম ভোটারদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি ছিল শুরু থেকেই। তবে, ইসরাইল-হামাস সংঘাতে বাইডেন প্রশাসনের ব্যর্থতার প্রতিফলন দেখা গেছে ব্যালটে।

যদিও, ক্ষমতার পালাবদল ও ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন নিয়ে খুব একটা আশ্বস্ত হতে পারছেন না পেনসিলভেনিয়ার সবচেয়ে জনবহুল শহর ফিলাডেলফিয়ার মুসলিম ভোটাররা। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন ট্রাম্প এ নিয়েও আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

এই শহরের বেশ কিছু মুসলিম ভোটারের অভিযোগ, ডেমোক্র্যাট কিংবা রিপাবলিকান যেই ক্ষমতা আসুক না কেন তাদের কণ্ঠস্বর হোয়াইট হাউজ পর্যন্ত পৌঁছায় না।

সামিরা নামের এক মুসলিম নারী বলেন, ‘হ্যাঁ, এ অঞ্চলে আমি সংখ্যালঘু। আমাদের কথা তাদের কাছে পৌঁছায় না। আমাদের দাবি তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার একমাত্র উপায় যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেয়া। আমার ধারণা, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় মুসলিমরা অন্তত ১০ ধাপ পিছিয়ে যাবে। আমাদের পূর্বপুরুষরা যে অধিকারের দাবিতে লড়েছেন তা পুরোপুরি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে।’

সামিরার মতো এমন অনেক নারী আছেন যারা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের কারণে সংখ্যালঘু মুসলিমরা যেমন তাদের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা হারাবে তেমনি সমান অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়বে নারীরা।

আরেক নারী জানান, নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, মুসলিম অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে আবারও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন তিনি।

এমন ঘোষণার পরেও ট্রাম্পের প্রতি আস্থা রেখেছেন ফিলাডেলফিয়ায় এমন মুসলিম ভোটারের সংখ্যা কম নয়। তারা মনে করেন, ২০১৬ সালে ট্রাম্প চাইলে মুসলিমদের জন্য অনেক কিছুই করতে পারতেন। সেবার আশাভঙ্গ হলেও তাদের বিশ্বাস মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত বন্ধে ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের চেয়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন।

এক ভোটার জানান, তিনি মুসলিমদের জন্য তেমন কিছুই করেননি। যদিও এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তিনি মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন। তিনি যুদ্ধ চান না।

এবারের নির্বাচনে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে দুই প্রার্থীর নীতি যতটা প্রাধান্য পেয়েছে তারচেয়েও বড় আলোচনার জায়গা ছিল অভিবাসন নীতি। অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন অধিকাংশ ভোটার। যদিও এতে করে বিপাকে পড়েছেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা।

যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশকারী অভিবাসীদের মধ্যে মেক্সিকো সীমান্ত ব্যবহার করেন এমন শরণার্থীর সংখ্যা সর্বোচ্চ। আর চলমান অস্থিরতার মধ্যে ভেনেজুয়েলা থেকে মেক্সিকোতে এসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে চান এমন অভিবাসীর সংখ্যা কম নয়।

সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার ও অভিবাসন নীতি কঠোর করা হলে তার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই এই ভেনেজুয়েলানদের। তারা বলছেন, অভিবাসী ইস্যুতে ট্রাম্প কিছুটা সহানুভূতিশীল আচরণ করলে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন তারা।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে একজন বলেন, ‘মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করবেন না। অনুরোধ করছি, অভিবাসীদের সাথে স্বার্থপরের মতো মিশবেন না। আমরা আপনাদের মতোই সাধারণ মানুষ। আমাদের সেখানে আসার সুযোগ দিন। যদি আপনাদের দেশে আমাদের জায়গা দিতে না চান, কানাডায় যেতে দিন।’

বিগত শাসনামলে অভিবাসন নীতিতে বড় ধরণের রদবদল করেন ট্রাম্প। ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত মেক্সিকোর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে শরণার্থী শিবিরে আটকা পড়েন কয়েক লাখ শরণার্থী।

এবারও অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করার ম্যানডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন ট্রাম্প। তাই রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত দেশগুলোর অভিবাসীদের উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে।

এএইচ