সইম সরদার বগুড়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন কৃষক। প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুর থেকে সেলো মেশিনের পুরনো যন্ত্রাংশ কিনতে এসেছেন বগুড়া শহরে। হাজার হাজার পুরনো যন্ত্রপাতির মধ্যে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসটি খুঁজে বেড়াচ্ছেন এক দোকান থেকে আরেক দোকানে।
সইম সরদার বলেন, 'পুরাতন জিনিস খুঁজছি। এতে করে দামে কম পাওয়া যায়, চলে ভালো। সেজন্যে এখান থেকে কিনতে আসছি।'
বিকল হওয়া পাওয়ার টিলার আর সেলো মেশিন কিনে তার সচল যন্ত্রাংশ খুলে ধুয়ে মুছে পুরনো যন্ত্রাংশের নতুন রূপ দেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। ভাঙরি পট্রি নামে পরিচিত বগুড়ার শাপলা মার্কেটের লোহা লক্করের টুংটাং শব্দ আর কমদামে ভালো জিনিসের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের আনাচে কানাচে।
বগুড়ার কৃষক সইম সরদার। ছবি: এখন টিভি
পাওয়ার টিলারের ২৪ ফাল ও ২৮ ফালের পেনিয়ামসহ টিলার ও সেলো মেশিনের বেশ কিছু যন্ত্রাংশ নতুন কিনতে পাওয়া যায় না, সে কারণে বাধ্য হয়েই কিনতে হয় পুরনো যন্ত্রাংশ। তাছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরি যন্ত্রাংশ ও নকল যন্ত্রাংশের ভিড়ে ক্রেতারা আস্থা রাখছেন পুরনো যন্ত্রাংশের উপরেই।
একজন ক্রেতা বলেন, 'পুরাতন নিলে অরিজিনাল পাওয়া যায়। কিন্তু নতুন নিলে সব লোকাল আছে। ভালো জিনিস নাই নতুনের মধ্যে। সেজন্য আমরা পুরাতনই নেই। দামেও কম পাওয়া যায়। বারবার নেয়াও যায়।'
কৃষকের পুরনো সেলো বা পাওয়ার টিলার বিকল হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হলে তা কিনে নেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। তারপর মেরামত করে ঠিক হলে আবারও বিক্রি করেন। ঠিক না হলে যন্ত্রাংশগুলো আলাদা আলাদাভাবে বিক্রি করেন। বাতিল যন্ত্রাংশ, ইঞ্জিন বডিসহ বাতিল হওয়া সব ধরনের লোহা থেকে ফাউন্ড্রিতে তৈরি হয় অন্যান্য যন্ত্রাংশ।
একজন বিক্রেতা বলেন, 'এখানে কমদামে জিনিস পায়। জিনিসটা অরিজিনাল পায়। সেজন্য এখানে থেকে কিনে নেয় সবাই। আনন্দের বিষয় হলো দক্ষিণবঙ্গের ৮ থেকে ১০টি জেলা থেকে আমাদের এখানে কাস্টমার আসে।'
দেশের কৃষিতে ভাঙারি পট্রির ভাঙারি ব্যবসায়ীদের অবদানও কম নয়। উত্তরের কৃষকদের পুরনো কৃষি যন্ত্রপাতি সহজে ক্রয় বিক্রয়ের অন্যতম এক ব্যবসা গড়ে উঠেছে এখানে। তাই এখানকার ব্যবসার প্রসার ঘটাতে ব্যবসায়িদের মূলধন বাড়াতে সহজ শর্তে ঋণ দেয়াসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেয়ার কথা জানালেন বিসিকের কর্মকর্তা।
বগুড়া বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহফুজুর রহমান বলেন, 'এইসব উদ্যোক্তার যদি কোনো সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা আমাদের নীতিমালা অনুসরণ করে তাদের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।'
১৯৯৫ সালে দুই বা তিনটি পুরনো যন্ত্রাংশের দোকান দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও এখন এখানে প্রায় ৭০ টি দোকান রয়েছে।