জেলে পল্লির পলাশী রানীর ঘরের কর্তা চাল আনতে পারলেই পাঁচ সদস্যের পরিবারে জুটবে আহার। গেল বার সর্বস্ব বিলীন হলেও এবার নদীতে গেছে অর্ধেক। তবে বাকি অংশ টিকবে কি না সেই চিন্তা তাদের।
পলাশী রানী বলেন, 'আমার ঘরটা আরও একবার জোয়ারে ভেঙেছিল। তখন আমি একপাশ থেকে টেনে আরেক পাশে দিয়েছিলাম। এখন আবারও ভাঙছে।'
ফেনীতে নদীপাড়ের এমন অনিশ্চয়তার জীবন হাজারও মানুষের। জেলার ছোট ফেনী, কালিদাস পাহালিয়া ও সিলোনীয়া নদী তীরে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে শতাধিক বসতি, রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমি। ঝুঁকিতে রয়েছে বাজার, মসজিদ,শ্মশানসহ এলাকার প্রধান সড়ক।
জেলে পল্লির পলাশী রানী। ছবি: এখন টিভি
স্থানীয় একজন বলেন, 'বাড়িঘর ভেঙে তো সবকিছু চলে য়ায়। আমাদের সবকিছুতেই কষ্ট। চলাফেরার কষ্ট। আমরা আসা-যাওয়াও করতে পারি না। সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা না করে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই আর। এখানে যদি ব্লক না ফেলায় তাহলে তো ঘরবাড়ি যেটুকু বাকি আছে তাও নদীতে চলে যাবে।'
বন্যার ক্ষত পূরণের আগেই মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে পড়ায় পানির চাপে বিলীন হচ্ছে নদী তীরবর্তী জনপদ। যার জন্য প্রভাবশালীদের অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনকে দুষছেন স্থানীয়রা। আগামী বর্ষার আগে ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে হাজারও পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে শঙ্কা স্থানীয়দের।
স্থানীয় একজন বলেন, 'বালু তোলার কারণে পুরো এলাকা নষ্ট হয়ে গেছে। নদী বড় হয়ে গেছে আমাদের এখন থাকার কোনো জায়গা নেই। সরকারের নিকট আমরা আকুল আবেদন জানাচ্ছি যে আমাদের এই নদীভাঙনের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার জন্য।'
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায় প্রাথমিকভাবে নদী ভাঙন ঠেকাতে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তবে নতুন করে মুছাপুর রেগুলেটর ও ক্লোজার নির্মাণ না হলে স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধ করা যাবে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, 'জরুরিভিত্তিতে কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছি। আর কিছু জায়গায় ব্লকেড কাজের জন্য বরাদ্দ চেয়েছি।'
ফেনীতে সহায়-সম্বল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন হাজারও নদীপাড়ের মানুষ। এমন অবস্থায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি ভাঙন কবলিতদের।