ইচ্ছে ছিল বুয়েটে পড়ার, কঠোর পরিশ্রমে চান্সও পেয়ে যান। কিন্তু আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর বাধসাধে বাবা-মা। বুয়েট বাদ দিয়ে এমআইএসটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হন শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, স্বৈরাচারের দোসরের হাতেই প্রাণ যায় ইয়ামিনের।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পুলিশের এপিসি থেকে হাইওয়েতে ফেলে দেয়া হচ্ছে একজনের মৃতদেহ। তার হাত ছড়িয়ে আছে, পা ভাঁজ করা। এরপর এপিসি থেকে এক পুলিশ অফিসার বাম দিকের দরজা খুলে দেন, আরেকজন ওপরের ঢাকনা খুলে যুবকটিকে টেনে বের করে অমানবিক ও নৃশংসভাবে রাস্তায় ফেলে দেন। সেই মৃতদেহটি মেধাবী ছাত্র ইয়ামিনের।
ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, বাড্ডা, উত্তরা, মোহাম্মদপুরের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি হত্যার ঘটনা ঘটে সাভারে। শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন গত ১৮ জুলাই সেই সাভারে ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় শহীদ হওয়া প্রথম শিক্ষার্থী।
কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে আনা হয় গণহত্যার সময় আশুলিয়ায় ৪৬ লাশ পোড়ানো ও ইয়ামিন হত্যা মামলাসহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শহীদুল ইসলামকে। এজলাসে পুরোটা সময় জুড়ে নির্বাক ছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে।
চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম জানান,সাভারে নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়ে শতাধিক মানুষকে হত্যার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। এদিকে শহীদুল ইসলামের আইনজীবী জানান, এই অভিযোগের সাথে আসামির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, 'এপিসি থেকে অচেতন অবস্থায় অত্যন্ত নির্মমভাবে ফেলে দেয়া হয়েছিল। তখনও সে জীবিত ছিল, তাকে টেনে হেঁচড়ে ডিভাইডারের পাশে নেয়া হয়। আবার চ্যাংদোলা করে ঢিল দিয়ে রাস্তার ওইপাশে ফেলে দেয়। তারপর তার পায়ের ওপর আবার গুলি করতে বলে। কিন্তু গুলি না করে তার অচেতন দেহের ওপর আবার টিয়ারমেল নিক্ষেপ করা হয়। পরবর্তীতে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে বাধা দেয়া হয়। একপর্যায়ে সে শহীদ হয়ে যান। তাকে তার পারিবারিক করবস্থানে পর্যন্ত দাফন করতে দেয়া হয়নি। এই নির্মমতার যে ঘটনা, এগুলোর সাথে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে।'
আসামিপক্ষের আইনজীবী শুভ্রত মন্ডল বলেন, 'অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেছেন যে এই মামলায় তার কোনো সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। তিনি এই মামলার সাথে কোনোভাবেই জড়িত নয়। মানে যেটা ঘটেছে তার সাথে তিনি সম্পৃক্ত নয়।'
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবনের সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম জানান, ১৫ নভেম্বর পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে শুরু হবে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারকাজ।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, 'ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন, আমাদের কাজ আর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই শেষ হবে। আর যে কাজ বাকি থাকবে তা হলো ফার্নিচার নিয়ে এসে সেগুলো ঠিক করা। এতে এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন সময় তাদের লাগবে। সেক্ষেত্রে অতদিন পর্যন্ত আমাদের শিফট করতে সময় লাগবে।'
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড়শ'র মতো অভিযোগ জমা পড়েছে।