র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা সরকার ও নীতিনির্ধারকদের প্রতি পাঁচটি মূল দাবি তুলে ধরে। এগুলো হল ভোগ্যপণ্য ও নিত্য ব্যবহার্য পণ্য যেমন অ্যালুমিনিয়ামের রান্নার বাসনপত্র, দেয়াল রং, শিশুদের খেলনা ইত্যাদিতে ক্ষতিকারক ভারী ধাতু সিসা মেশানো বন্ধ করা; বিভিন্ন জিনিসের নিরাপদ মানদণ্ড ও কঠোর মনিটরিং নিশ্চিত করা; দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা অনিরাপদ সিসা-অ্যাসিড ব্যাটারি কারখানাগুলো বন্ধ করে বা রূপান্তরিত করে নিরাপদ ও পরিকল্পিত রিসাইক্লিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; অবৈধ সিসা ব্যাটারি কারখানার কারণে দূষিত এলাকাগুলো চিহ্নিত করে মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সিসা দূষিত অঞ্চলগুলো পরিষ্কার করা; সিসা দূষণ প্রতিরোধে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালাগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ এবং অংশীদারদের সাথে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে সিসা দূষণের উৎস ও ভয়াবহতা সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টি করে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষা করা।
র্যালিতে ৫০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি অংশ নেন। সকাল ১১টায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে র্যালি শুরু করে মানববন্ধন তৈরির মাধ্যমে দুপুর ১২টায় শেষ হয়। এসময় সবার হাতে ছিল সিসা দূষণ প্রতিরোধমূলক ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড এবং মুখরিত ছিল ‘সিসা দূষণ প্রতিরোধে, আমরা আছি একসাথে’- সহ বিভিন্ন স্লোগানে।
সিসার বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করতে সর্বস্তরে সচেতনতা বাড়ানো এবং সরকার ও নীতিনির্ধারণী মহলকে এ বিষয়ে আইন ও নীতিমালার যথাযথ প্রয়োগ করে কঠোর ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে জোর দেওয়া ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। এসময় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সিসা দূষণ বিষয়ক লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করা হয়।
এসময় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে সিসা দূষণের বিস্তৃতি ভয়াবহ পর্যায়ে থাকা সত্ত্বেও এর প্রভাব ও উৎস নিয়ে সাধারণ জনগণ ও নীতিনির্ধারণী মহলে সচেতনতা খুবই সীমিত। যার ফলে, বিশ্বে সর্বোচ্চ সিসা দূষিত দেশের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের মানুষদের রক্তে মাত্রাতিরিক্ত সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু অর্থাৎ দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ শিশুর রক্তে উচ্চ মাত্রায় সিসা আছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সিসা দূষণের কারণে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ (সিভিডি) বা হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে যার ফলে বছরে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে।
গর্ভবতী নারীদের রক্তে সিসার উপস্থিতি গর্ভপাত, মৃত সন্তান প্রসবসহ নানা ঝুঁকির সৃষ্টি করে। এ ধরনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে ‘আন্তর্জাতিক সিসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ ২০২৪’ চলাকালীন জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সরকার ও জনসাধারণের কাছে সিসা দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইউনিসেফের সোশ্যাল অ্যান্ড বিহেভিওরাল চেঞ্জ অফিসার, মনজুর আহমেদ বলেন, ‘ইউনিসেফ গত বছর সিসা দূষণ প্রতিরোধে একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে এবং সেই সাথে পিওর আর্থের মত উন্নয়ন সংস্থার সাথে তিনটি উদ্দেশ্যে কাজ করছে। এগুলো হলে সিসা দূষণ প্রতিরোধে দক্ষতা বৃদ্ধি, গণসচেতনতা এবং অ্যাডভোকেসিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা।’
ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, ‘এ লড়াই হলো নীরব ঘাতক সিসা দূষণকে নির্মূল করে আমাদের শিশুদের জন্য সুস্বাস্থ্য ও সিসামুক্ত নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার। মানুষকে সচেতন করার এবং কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার এখনই সময়। আমরা যুব সমাজের প্রতিনিধিরা সবাই একসাথে আওয়াজ তুলছি, দাবি জানাচ্ছি - সিসা-মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার।’