'বিচার যখন প্রহসন, লড়াই তখন আমরণ' স্লোগানে মুখর হয়ে আছে কলকাতার রাজপথ। আর জি করের নারী চিকিৎসক হত্যার বিচার ছাপিয়ে সামনে এসেছে রাজ্যের স্বাস্থ্যসেবার পরিকাঠামো, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা, সিন্ডিকেট ও ভয় দেখানোর রাজনীতি বন্ধের দাবি।
আন্দোলনকারী একজন ডাক্তার বলেন, 'যতদিন বিচার না পাবো, ততদিন পথে থাকতে হবে। লড়াই থামবে না।'
এমন বাস্তবতায় শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) রাজ্যের সব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিনিধিদের নিয়ে নবান্নে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। বৈঠকে স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদেরও থাকতে বলা হয়েছে।
প্রতিবাদ কর্মসূচির পাশাপাশি ১০ দফা দাবিতে ১৩ দিন ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। মনোবল অটুট থাকলেও শরীর ভাঙতে শুরু করেছে অনেকেরই। ধর্মতলা মঞ্চ ও উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ মিলিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে ছয় জন। তবে, এখনও অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন আট জন জুনিয়র চিকিৎসক।
এছাড়া আরজি করে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা, ২০২৩ সালের র্যাগিংকাণ্ডের বিচারসহ সাত দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ধর্নায় বসছেন ছাত্রছাত্রী, গবেষক, অধ্যাপক ও কর্মচারীরা। গঠন করা হয়েছে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম 'জেইউ ফর জাস্টিস'। চলমান আন্দোলনে, ডাক্তারদের দাবিগুলো সমর্থন জানান তারা।
এদিকে, চলমান জুনিয়র চিকিৎসকদের সাথে সিনিয়র ডাক্তার ফোরামের যোগ দেয়াকে একেবারেই ভালো চোখে দেখছেন না তৃণমূলের নেতারা। আন্দোলনরতদের বামপন্থী আখ্যা দিয়ে তাদের উপনির্বাচনে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে হলে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। প্রতিক্রিয়ায় সিপিএম নেতারা বলছেন, ডাক্তাররা তাদের কাজ করছেন, সিপিএম ও নিজের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। এবার নিজেদের ভরাডুবি আটকাতে তৃণমূলের সোচ্চার হওয়া উচিত।
তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ বলেন, 'শুধু মুখে কথা কেন? শুধু মুখের কথায় মানুষদের কেন বিভ্রান্ত করছেন? সিনিয়র ডাক্তারদের বলছি যারা এই বড় বড় বিপ্লবী বুলি আওড়াচ্ছেন আপনারা তো সিপিএম। সিপিএমের হয়েই এই ছয়টার যেকোনো একটায় এই নেতারা দাঁড়াক।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'সিপিএম তার মতো কাজ করুক। জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের কাজ করুক। তৃণমূল মানুষের সর্বনাশ করার কাজটা যেন ঠিকমতো করে করতে পারে কুনাল ঘষে সেটাই পারলে দেখুন। কারণ এটাই ওদের একমাত্র কাজ।'
গেল দু'মাসের বেশি সময় ধরে সাধারণ মানুষ ও বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যসচিবকে তলব করে আরজি কর-কাণ্ডের বিচার ও তদন্ত প্রক্রিয়ার সবশেষ অগ্রগতি নিয়ে এদিন বৈঠকও করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও রাজ্য সরকারের এসব তৎপরতাকে লোক দেখানো বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।