দেশে এখন
0

নড়াইলের নবগঙ্গা ভাঙনে নদীগর্ভে অর্ধশতাধিক বসতভিটা

প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বর্ষা মৌসুমে নবগঙ্গা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। গত ১৫ দিনের অব্যাহত ভাঙ্গনে নদীগর্ভে চলে গেছে অর্ধশতাধিক বসতভিটার কাঁচাপাকা ঘর, গাছপালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। আর ভাঙনে রয়েছে অন্তত তিন শতাধিক বসতবাড়ি, পাকা রাস্তা, কবরস্থান, মসজিদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এতে আতঙ্কে নদীপাড়ের বাসিন্দারা।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের তিনমাস নবগঙ্গা নদীপাড়ের বাসিন্দারা তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি শুরু হয়েছে নবগঙ্গার ভাঙন। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা।

শৈশবে নবগঙ্গা নদী পাড়ের বাসিন্দা ছিল কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের ইমদাদ মাস্টার। জীবনের বেশিরভাগ সময় নবগঙ্গার সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করেই বসবাস করেছেন তিনি। প্রতি বছরই সর্বনাশা নদী গিলে খেয়েছে তার ফসলি জমি, বসতভিটা। জীবদ্দশায় তিনটি বাড়ি নির্মাণ করলেও একটিতেও স্থায়ীভাবে বাস করতে পারেননি। নদীর কাছে হার মেনে আজ অসহায় তিনি।

ভুক্তভোগী মো. ইমদাদ মাস্টার বলেন, 'আমার কোনো জায়গা জমি নাই। আমরা ৫ থেকে ৬ টা ঘর ছিল। কিন্তু সব নদীর কবলে চলে গেছে।'

নদী ভাঙনের তিক্ত অভিজ্ঞতা শুধু ইমদাদ মাষ্টারেরই নয়। কালিয়া উপজেলার হাজারো বাসিন্দাদের কাছে নদী ভাঙন যেন এক অভিশাপ। গেল তিন সপ্তাহ ধরে একটু একটু করে ভাঙছে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা। গত দুই সপ্তাহের অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে অর্ধশতাধিক বসতভিটা আর ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে শত শত ঘরবাড়ি, কবরস্থান, মসজিদ, পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

নদী ভাঙনের কবলে ইমদাদ মাষ্টার। ছবি: এখন টিভি

ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজন জানান, নদী ভাঙনে আমাদের খেয়াঘাটে এই পাশে কয়েকটা দোকান ছিল। সব নদী ভাঙনে নিয়ে গেছে।

আরও একজন জানান, ৬০ বছর বয়স আমার প্রতি বছর দেখতেছি এমন নদী ভাঙন । এই নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

এরই মধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ দিয়ে নদী ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হবে বলে জানান তারা। এছাড়া ভাঙনকবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

খুলনার বাপাউবো যশোর পানি উন্নয়ন সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সাবিবুর রহমান বলেন, 'এখানে ভাঙনের যে প্রবণতা সেটি বিবেচনায় আমরা নিয়ে দ্রুত আমরা জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই ব্যবস্থাটি করবো। একই সাথে আমাদের এই নদীর পাড়গুলো যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ আছে সেই জায়গাগুলোই যাতে ভাঙন নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেই লক্ষ্যে আমরা একটা প্রকল্প প্রণয়ন করবো।'

ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা নদী ভাঙন রোধের স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি কেউই। আর আশ্বাস নয়, এবার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ দাবি স্থানীয়দের।