বিশ্ব অর্থনীতি
অর্থনীতি
0

আস্থাহীনতায় ঋণ নিতে পিছু হটছে চীনের মানুষ

কোভিড পরবর্তী অর্থনীতির ধাক্কা সামলাতে বেশ কিছু পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে চীন। তবে তা যথেষ্ট নয় বলে দাবি করছেন বিশ্লেষকরা। জাতীয় ঋণ ৭ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়ানোয় বেইজিংয়ে বিনিয়োগে দ্বিধায় পড়ে গেছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে, আস্থাহীনতায় ঋণ নিতে পিছু হটছে দেশের জনগণ। ৭৫ বছরে পা রাখা গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের আর্থিক খাতের চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

১৯৪৯ সালের পহেলা অক্টোবর কমিউনিস্ট নেতা মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা পায় পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। ৭৫ বছর বাদে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হলেও কোভিড পরবর্তী ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি শি জিনপিং প্রশাসন।

অর্থনীতির ধকল সামলে উঠতে সম্প্রতি নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে চীনা সরকার। এর আওতায় সাহায্য পাবে সংকটে জর্জরিত আবাসন খাত, পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে দেয়া হবে প্রণোদনা, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দেয়া হবে নগদ সহায়তা, এমনকি জনগণের সুবিধার্থে বাড়ানো হবে সরকারের ব্যয়। নতুন পরিকল্পনা ঘোষণার পর চীন ও হংকংয়ের পুঁজিবাজারে সূচক পৌঁছায় ২০০৮ সালের মন্দার পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে যথেষ্ট নয় এই পরিকল্পনা।

সাম্প্রতিক সময়ে চীনে বহুমুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আবাসন খাত। তিন বছর ধরে চলা মন্দায় অনেক বাড়িই এখনও অবিক্রীত। ফাঁকা পড়ে আছে শত শত ফ্ল্যাট। সংকট নিরসনে বাড়ানো হয়েছে ঋণসীমা, বন্ধকি ঋণে কমানো হয়েছে সুদের হার। এমনকি দ্বিতীয়বার বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ডাউন পেমেন্টও কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, নতুন পরিকল্পনাগুলো হাউজিং মার্কেটে গতিশীলতা ফেরাতে পারবে না। কারণ মূল সংকট তৈরি হয়েছে গ্রাহকদের আস্থায়। তাই সর্বনিম্ন মূল্যে পাওয়া গেলেও ঋণ নিয়ে বাড়ি কেনায় আগ্রহ নেই জনগণের।

ন্যাটিক্সিসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ গ্যারি এনজি বলেন, ‘নতুন নীতিগুলো রিয়েল এস্টেট মার্কেটে কতটুকু প্রভাব রাখবে, এ বিষয়ে এখনো অনিশ্চিত। সংবাদ সম্মেলনে যখন এই নীতিগুলো জানানো হয়, তখনই দেখতে পাই অনেক কম পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বাজারও বুঝতে পেরেছে, সহায়তাগুলো ধারণার চেয়েও কম ছিল।’

গেল কয়েক দশক ধরে যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ করেছে চীন। এক্ষেত্রে কাড়ি কাড়ি ঋণ নিয়েছে স্থানীয় সরকার। অনেক ক্ষেত্রেই অপ্রয়োজনীয় এই ঋণ এখন বেলুনের মতো ফুলে দাড়িয়েছে ৭ ট্রিলিয়ন ডলারে। চীনের আর্থিক ব্যবস্থা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হওয়ায় শিগগিরই দেশের মোট ঋণ কমার কোন সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকরা।

ন্যাটিক্সিসের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ গ্যারি এনজি বলেন, ‘আমার মতে মৌলিক কিছু বিষয় পরিবর্তন করা প্রয়োজন। চীনের সম্পদের ওপর ঝুঁকি বাড়ছে। বৈশ্বিক নীতি সুদ হারও কমতির পথে। তাই সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সামনে আরও চ্যালেঞ্জ আসবে নীতি সুদ হার কমার কারণে।’

চলতি বছর বার্ষিক আর্থিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে শি জিনপিং সরকার। যা বিশ্বের অনেক প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর চেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে রপ্তানির ওপর ভরসা রাখতে চাইছে চীন। তবে বিপত্তি হলো, গুণহীন পণ্য রপ্তানির আধিক্য কমিয়ে দিচ্ছে মুনাফাকে। আবাসন ও অবকাঠামো খাত থেকে সরে এসে উচ্চ পর্যায়ের শিল্পের ওপর নির্ভর করে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি গড়ার চেষ্টায় ব্যস্ত কমিউনিস্ট আইন প্রণেতারা। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরোনো ও নতুন অর্থনীতি একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। আবাসন ও অবকাঠামো খাতের মতো পুরোনো অর্থনীতি যদি খুব দ্রুত ধসে পড়ে, সেক্ষেত্রে বাধা আসবে নতুন অর্থনীতির উত্থানে।

মাত্রই ৭৫ বছরে পা দেয়ার অর্থ, কমিউনিস্ট দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় পৃথিবীর মানচিত্রে টিকে থাকার রেকর্ড গড়েছে চীন। সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো পরিণতি ঠেকাতেও চীনকে সচেনত হতে হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর