সংস্কার। যেটি শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন দিয়ে। বৈষম্যবিরোধী এই আন্দোলন দমাতে যখন কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার সরকার হত্যাযজ্ঞে মত্ত, ততক্ষণে সংস্কার শব্দটি সরকার পতনের ভূমিকায়।
পহেলা জুলাইয়ের সে আন্দোলন যখন ৫ আগস্টে পরিণতি পায়, ততক্ষণে সেই সংস্কার শব্দটি স্বপ্ন হয়ে গেঁথে যায় কোটি তরুণের মনে, মানুষের হৃদয়, আর দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। গোটা জাতি তখন হয়ে ওঠে সংস্কারপন্থী রূপে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান, শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়া আর আওয়ামী সরকারের পতনের তিন দিনের মাথায় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। টানা ১৫ বছরের শাসনামলে যখন দেশের অর্থনীতি, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, সাধারণ মানুষ এসবের পরিবর্তন চায়; তখন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারেরও লক্ষ্য দেশ সংস্কারের। ইতোমধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশনও গঠন করেছে ইউনূস সরকার।
গঠিত এই ছয় কমিশনের সঙ্গে মিল রেখে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। যদিও রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা রূপরেখা আগেই দিয়েছে তারা। দেশের পট পরিবর্তনের পর সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নানা মত প্রকাশ করে আসলেও সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরে জামায়াতে ইসলামী। সংস্কারের এ প্রলয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর এসব প্রস্তাব কতটা জনবান্ধব?
সংসদের প্রধান বিরোধী দল থেকে একজন ডেপুটি স্পিকার, সংসদীয় বিরোধীদলীয় নেতার নেতৃত্বে ছায়া মন্ত্রিসভা গঠন, সরকারি চাকরি ছাড়ার তিন বছরের মধ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে করা এবং আইন মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা করে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করাসহ এমন সব প্রস্তাব নিয়ে দ্বিমত রয়েছে বিশ্লেষকদের মধ্যে।
তবে অচলাবস্থা কাটাতে যেসব সংস্কার দরকার সেগুলোকে প্রাধান্য দেয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের সব প্রত্যাশা পূরণ করা এ সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সংস্কারের অগ্রগতির ধারা ও পদ্ধতি সূচনা করে দিতে হবে এ সরকারকেই।
অভ্যুত্থানের দু'মাস পরও যখন অন্তর্বর্তী সরকার থিতু হতে পারেনি, তখন নানা অঙ্গীকারের কথা বলছে সরকার। তাই সংস্কার প্রশ্নে সবার খোলাখুলি মতামতের ভিত্তিতে সংস্কারের এসব কাজ সরকারকেই শুরু করতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।