প্রবাস
অর্থনীতি
0

গত ১৫ বছরে আস্থাহীনতায় রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ কম ছিল প্রবাসীদের

ব্যাংকিং চ্যানেলে গত সেপ্টেম্বর মাসে ছয় বছরের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা চলতি অর্থবছরের সর্বোচ্চ। তবে, গত ১৫ বছরে অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাতে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি আস্থা না থাকায় বৈধভাবে আয় পাঠানোর আগ্রহ কম ছিল বলছেন প্রবাসীরা। আর শুধু সরকার পতন নয়, হুন্ডি ব্যবসা কমায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রভাব বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্লেষকরা।

সেপ্টেম্বর মাসে রেমিটেন্স আগস্ট মাসের তুলনায় ১৮ কোটি ডলার বেশি এসেছে। যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত মাসে ২৪০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে, যা গত বছরের একই মাসে ছিল ১৩৩ কোটি ডলার। সে হিসাবে দু বছরের একই সময়ে আয়ের প্রবাহ বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি।

গত ছ'বছরের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে সেপ্টেম্বরে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পরপরই প্রবাসী আয়ে এমন প্রভাব। এরআগে ২০২৪ অর্থবছরের জুনে এসেছে ২৫৪ কোটি ও ২০২১ অর্থবছরের জুলাইয়ে এসেছে ২৬০ কোটি ডলার। এরমধ্যে গত জুন মাসে ছিল ঈদুল আজহার উপলক্ষ।

এতে বিগত সরকারের প্রতি অনাস্থার বিষয় তুলে ধরেছেন অনেকে। ফলে নতুন সরকার এসে যে সংস্কার ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে এতে পুনরায় আস্থা তৈরির কথা বলা হচ্ছে।

মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি একজন বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি আমাদের আস্থা না থাকায় আমরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠায়নি। বর্তমান সরকারের প্রতি আস্থা থাকায় আমরা আবারও ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানো শুরু করেছি।’

ব্যাংকাররা বলছেন, নতুন সরকার গঠনের শুরু থেকেই প্রবাসীরা হুন্ডিতে রেমিটেন্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। এখন তারা লাইনে দাঁড়িয়ে হলেও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠান। যার কারণে দেশের প্রবাসী আয় ব্যাপক পরিমাণে বাড়ছে। 

আর বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ১৫ বছরে যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা করতো। সরকারের পতনের পর তা অনেকটা কমেছে। যে কারণে অনেকেই বাধ্য হয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আগামীতে বৈধ পথে প্রবাসী আয় অব্যাহত রাখতে ও হুন্ডি ব্যবসা বন্ধে দরকার সদিচ্ছা, রাজনৈতিক নৈতিকতা ও পারিবারিক উদ্যোগ।

ব্যাংকাররা বলছেন, রেমিটেন্স বৃদ্ধির ফলে স্থিতিশীল হয়েছে ডলার বাজার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১২০ টাকায় স্থির রয়েছে। তবে এখনও কিছু ব্যাংকের প্রবাসীরা পার্থক্য ৫০ পয়সায় নামিয়ে আনার দাবি তুলেছেন বলে জানান তারা।

তবে, রেমিট্যান্স প্রভাব বাড়ায় ও বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি না করায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থির আছে বলে জানান বিশ্লেষকরা। তথ্য মতে, ২ অক্টোবর শেষে গ্রোস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৪.৭৭ বিলিয়ন ও বিপিএম-৬ অনুযায়ী ১৯.৭৬ বিলিয়ন ডলার। যা বিগত সরকারের আমলে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে ১৮ বিলিয়নের ঘরে নেমে যেতে দেখা গেছে।

তাই রিজার্ভ ঠিক রাখতে ও আমদানি ঘাটতি মেটাতে রেমিট্যান্সের এই প্রবাহ ধরে রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। সেজন্য হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসীরা যে সুযোগ সুবিধা পায় তা সরকারকে দিতে হবে বলে জানান তারা।

অর্থনীতি বিশ্লেষক আল আমিন বলেন, ‘হুন্ডি যারা ব্যবসা করে থাকে তাদের এজেন্ট থাকে। তারা খুজে কাদের আকামা বাড়ানোর ফান্ড নেই কিন্তু কাজ পেলে দিবে সেইভাবে হুন্ডির টাকা কালেক্ট করে। আবার কারো বেতন হয়নি কিন্তু বাড়িতে টাকা পাঠাতে হবে এই লেবেল পর্যন্ত তারা রিচ করে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এখন ভাবা উচিত কোনোভাবে প্রণোদনা বা স্কিম দেয়া যায় কিনা তাদের ক্রাসিস সময়ে।’ 

অপরদিকে হুন্ডির পাশাপাশি অর্থপাচারও রেমিট্যান্স বৈধভাবে আসার বড় বাধা বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ। তাই আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসের বিষয়টি সঠিকভাবে নজরদারি করার কথা জানান তিনি।

অর্থনীতিবিদ ড.জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অর্থ পাচার রোধ করতে হবে। যেটা হতো এক্সোপোর্টের আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসের বিষয়টির মাধ্যমে ফরমাল চ্যানেলে এই অর্থপাচার হয়ে থাকতো। এইটা বন্ধ করার জন্য এনবিআরের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাত্ররা যেভাবে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়েছে। তেমন সবার উচিত দেশের অর্থনীতির স্বার্থে তাদের পরিবারে হুন্ডি বা অর্থ পাচারের সাথে জড়িতদের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসা।

ইএ